বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩ ২২:৪১ পিএম
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩ ২৩:৪০ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরহাজুল ইসলাম শিবলীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। প্রবা ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিরহাজুল ইসলাম শিবলীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৯ মে) বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়স্থ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ রেলওয়েকে তিন দফা দাবি জানিয়েছে। এসব দাবি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পূরণ করার আল্টিমেটাম দেন। দাবিগুলো হলো- হত্যাচেষ্টাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা এবং রেলওয়ের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রেলওয়েকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি এবং ঘটনার পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ, যাত্রী হিসেবে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ণালী ঘোষ বলেন, ‘দরজায় ব্যাগ রাখার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সহযাত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয় শিবলীর। তৎক্ষণাৎ কোনো ঝামেলা না হলেও কালিয়াকৈর রেল সেতুর কাছে পৌঁছালে তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সেজন্যই আমাদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ। আমাদের তিন দফা দাবির আশু বাস্তবায়ন চাই।’
রিফাত জাহান শাওন বলেন, ‘শিবলীকে যেভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে, কীভাবে তাদের দাবি আদায় করতে হয়। রেলওয়ের দায়িত্বহীন আচরণের জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা দ্রুত তিন দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই। নাহয় এমন ঘটনা আরও ঘটবে। এসব ঘটনা জানান দেয়, ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়, সাধারণ জনগণও নিরাপদ নয়।’
জিনিয়া ইসলাম বলেন, ‘শিবলী নিজের জীবন নিজে বাঁচিয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের কি দায়িত্ব ছিলো না, তার খোঁজ নেওয়ার? একঘন্টা পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। একঘন্টার মধ্যে যদি সে মারা যেতো, তাহলে কি হতো?’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে ফেলে দিয়ে আহত করার ঘটনাটি বর্তমান সমাজের অবস্থা অনুধাবন করতে সাহায্য করে। দুঃখের বিষয় হলো, এখনও বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তারা কোনো মন্তব্য বা মতামতও প্রকাশ করেনি। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি শিবলির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এগিয়ে না আসে, ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ না করে- তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।’
শনিবার (৬ মে) মিরহাজুল ইসলাম শিবলী রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে ঈদের ছুটি শেষে ঢাবি ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। চলন্ত অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ৪১ নম্বর রেলসেতুর সামনে শিবলীকে ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেয় দুই ব্যক্তি।
আহত শিবলী কোনোমতে ৯৯৯ এবং ঢাবির সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানীকে ফোন দিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। পরে একঘন্টা পর পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। বর্তমানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে আজকের প্রতিবাদ সমাবেশ।