কাওছার আহমদ, সিলেট
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১২:১৬ পিএম
ছবি সংগৃহীত
সিলেটে তিন মাসেও তিন বিষয়ের বই পায়নি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বিষয় তিনটি হলো বাংলা, গণিত ও ধর্ম শিক্ষা। অন্যান্য বইও শতভাগ পাওয়া যায়নি। সামনে রমজান ও ঈদুল ফিতরের বন্ধ। ফলে রমজানের আগে না পেলে বছরের অন্তত পাঁচ মাস নতুন বই পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। এতে শিখন দুর্বলতা নিয়েই পরবর্তী ক্লাসে উঠতে হবে তাদের। এসএসসি পরীক্ষায়ও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রত্যেক শ্রেণির পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়ের অনেক পর শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে কয়েক ধাপে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শতভাগ বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিপাকে পড়ে নবম শ্রেণি পড়ুয়ারা।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সিলেট জেলায় স্কুল, মাদ্রাসা, ভোকেশনাল, ইংরেজি ভার্সন মিলিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ের মোট চাহিদা ছিল ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৪ সেট। পাওয়া গেছে ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৮ সেট। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ দুই হাজার ৬০৬ সেট।
মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলগুলোর চাহিদা ছিল ৪০ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৮ সেট। পাওয়া গেছে ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার ৪২ সেট। দাখিলে চাহিদা ছিল ১০ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯৮, এবতেদায়ীতে ছয় লাখ ১৭ হাজার ৩৬৮, ইংরেজি ভার্সনে ৬৬ হাজার ৮৯০, এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ৩১ হাজার ৪৪০ সেট। এসব স্তরে শতভাগ বই পৌঁছেছে। অর্থাৎ শুধু স্কুলগুলোতেই ঘাটতি রয়েছে। আর এটি শুধু নবম শ্রেণিতে।
সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রশিদ আহমদ। তিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কীভাবে পূরণ হবে? গণিতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বই এখনও পাওয়া যায়নি। সামনে রমজান ও ঈদুল ফিতরের বন্ধের পর স্কুল খুললেও ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ অনেক ছুটি থাকে। শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষা দেবে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।
আব্দুল বারি সুজন নামে আরেক অভিভাবক বলেন, বছরের তিন মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু বই দেওয়া হচ্ছে না। এর প্রভাব পরবর্তী ক্লাসে পড়বে।
সন্তান বই না পাওয়ায় হতাশার কথা জানালেন কানাইঘাটে অবস্থিত জুলাই আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বদরুল আলম। একই স্কুলের আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল মান্নান বলেন, স্যারদের অনুরোধ করেছিলাম অন্তত গণিত বইটা দিতে। কিন্তু তারা সেটি দিতে পারেননি।
কানাইঘাট রামিজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা গত বছরের বই থেকে ফটোকপি করে পড়াশোনা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জকিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আপাতত পুরোনো বই সংগ্রহ করে অথবা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে শিগগিরই বই পেয়ে যাবে। এ ছাড়া আমাদের কাছে প্রত্যেক শ্রেণির দুই-একটি বই থাকে। সেগুলো দিয়ে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছি।
সিলেট জেলা শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর হাতে চলে গেছে। অবশিষ্ট বইও খুব কম সময়ের মধ্যে পৌঁছবে।
পাঠ্যবইয়ের ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহমদ।