× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেডিকেলে প্রথম রাফসানের সাফল্যের নেপথ্যে পরিবার

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:০৪ পিএম

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:৩৫ পিএম

সোমবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম রাফসান জামান। প্রবা ফটো

সোমবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এ বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম রাফসান জামান। প্রবা ফটো

চট্টগ্রামের হালিশহরের কে-ব্লক এলাকার আলিফ ক্যাসেল। নিরিবিলি এই বাড়িকে ঘিরে রবিবার (১২ মার্চ) বিকাল থেকে রাজ্যের ভিড়। এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থানে থাকা রাফসান জামান এই ভবনে থাকেন। ভিড় পেরিয়ে রাফসানের সাক্ষাৎ পেতে অপেক্ষা করতে হলো পাক্কা দুই ঘণ্টা।

রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করা রাফসান এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে নিউরোসার্জন হওয়াই তার লক্ষ্য।

সোমবার (১৩ মার্চ) বেলা ২টার দিকে ওই ভবনের চারতলার বাসায় গিয়ে রাফসানের পরিবারের সব সদস্যকেই একসঙ্গে পাওয়া গেল। এরা হলেন রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান, মা কাউসার নাজনীন ও বড় বোন সাদিয়া ইবনাত রাইসা। ঘরে ঢুকতেই খানিকটা লাজুক হেসে দুঃখ প্রকাশ করে এ কে এম শামসুজ্জামান বললেন, ‘দুঃখিত, আপনাদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।’

রাফসানের চেহারায় তখন ক্লান্তির ছাপ। তবে সেই ক্লান্তি ছাপিয়ে সাফল্যের আলোকছটা যেন ছড়িয়ে আছে তার চোখেমুখে। কথা বলতে গিয়ে তার দ্যুতিই যেন ছড়ালেন তিনি। বললেন, ‘আসলে কাল থেকে অনেক ব্যস্ত। একের পর এক কল আসছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গণমাধ্যমের লোকজন আসছেন। একটুও অবসর পাচ্ছি না। তবে আমার পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব শিক্ষক সবাই খুব খুশি। এজন্য বেশি ভালো লাগছে। এতজনের মুখে আমি হাসি ফুটাতে পেরেছি এটা ভাবলে বেশি ভালো লাগা কাজ করছে।’

সাফল্যের পেছনের কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাফসান বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার বড় বোন সাদিয়া ইবনাত রাইসা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। পড়াশোনার প্রতি তার যে ডেডিকেশন সেটাও আমার জন্য বড় একটা অনুপ্রেরণা ছিল। এর বাইরে ক্যাডেট কলেজে আমার সহপাঠী বড় ভাই ও শিক্ষকরা সব সময় ভালো কিছু করার প্রেরণা জুগিয়েছে।’

আলাপ করতে গিয়ে জানা গেল, এই সাফল্যের গল্পটা এক দিনে রচিত হয়নি। অন্তত তিন প্রজন্মের ধারাবাহিকতার কথা উঠে এলো সেই আলাপে। আর এই ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনের কারণ হিসেবে উঠে এলো পারিবারিক অনুশাসন মেনে চলার কথা। কী সেই অনুশাসন? উচ্চাভিলাষমুক্ত সৎ নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক। রাফসানের দাদা অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেন ছিলেন রংপুরের কারমাইকেল কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। বাবা শামসুজ্জামান রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি-এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। সেখান থেকে মাস্টার্স শেষ করে যোগ দেন সিটি গ্রুপে। শুরুতে খুলনায় শাখা অফিসে কাজ করলেও ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম প্রধান অফিসে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে সিটি গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।

একেএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সব সময় একটা পারিবারিক অনুশাসন মেনে চলেছি। আমাদের সন্তানরাও যেন সেটা মানে সেটায় জোর দিয়েছি। আমরা শুধু নিশ্চিত করেছি সে যা করছে সেখানে কোনো অন্যায় নেই, খারাপ কোনো কিছুতে যেন না জড়িয়ে যায়। আর বাসার বাইরে কতক্ষণ থাকছে, সময়মতো বাসায় ফিরছে কি না, এসব তদারকি করতাম। খুব বেশি শাসন-বারণ করিনি। করার দরকারও হয়নি। কখনও কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিইনি। তাদের স্বাধীনতা দিয়েছি।’

রাফসান স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না এমন প্রচারে ভরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান বলেন, ‘একেবারেই ব্যবহার করত না, তেমন না। অতিরিক্ত ব্যবহার করত না। পড়াশোনার প্রতি তার মনোযোগ ছিল বেশি। সেসব প্রয়োজনে যতটুকু ব্যবহার করার তা করত। ’

একই কথা উঠে আসে মা কাউসার নাজনিনের কথায়। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলেমেয়েই ছোটবেলা থেকে খুব সুবোধ। তাদের নিয়ে কখনও খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। এটা আসলে জেনেটিকলি পাওয়া। ওদের বাবাও খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করা মানুষ। আমি কখনও আমার ছেলেমেয়েদের সামনে কোনো লক্ষ্য বেঁধে দিইনি। তারা যা করতে চেয়েছে, সেটা ভালো মনে হলে সে পথে হাঁটতে সহযোগিতা করেছি। রাইসা আঁকাআঁকি পছন্দ করত। আমি তাকে নিয়ম করে আর্ট স্কুলে নিয়ে যেতাম। রাফসান ম্যাথ আর ফিজিকস অলিম্পিয়ার্ডে দুবার জাতীয় পর্যায়ে গিয়েছিল। পরে তার আর আগ্রহ না থাকায় আমরা জোর করিনি। সব সময় চেয়েছি তারা যেন সৎ থাকে। আমরা সেটাই শুধু নিশ্চিত করেছি। আর সৎ থেকে তাদের ভালো লাগার পথে হাঁটায় তাদের সহযোগিতা করেছি। আমার কাছে মনে হয় এতে তাদের সফলতা অর্জন সহজ হয়েছে।’

পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের এমন সফলতা কতটা ছুঁয়ে গেছে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোফাজ্জল হোসেনকে? জানতে চাইলে শামসুজ্জামান বলেন, ‘তিনি খুব খুশি। ফোন করে কান্নাকাটিও করেছেন খুশিতে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা