ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৭:০৬ পিএম
বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। প্রবা ফটো
ছাদবাগান বললে প্রথমেই মাথায় আসে শৌখিন কোনো মানুষের বাড়ির ছাদবাগানের কথা। তবে এবার বিষয়টা তা নয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।
শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিটের এই ছাদবাগানে রয়েছে দেশিবিদেশি প্রায় ৩ শতাধিক ফুল ও ফলসহ শাক-সবজির গাছ। শুধু ছাদবাগানেই সীমাবদ্ধ নয়, আছে বিদ্যালয় চত্বরসহ অফিস, শ্রেণিকক্ষ পরিপাটি করে সাজানো। গ্রিলে ও ছাদে ঝুলছে বাহারি লতা-পাতা। ছাদে বসে পাঠ্যপুস্তকসহ প্রকৃতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরিচয় হচ্ছে বিভিন্ন ফল ও ফুলগাছের সঙ্গে। তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে বৃক্ষপ্রেম। সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী মানসিকতা।
একদিকে এই ছাদবাগানের কারণে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেমন সবার মন কাড়ছে, অপরদিকে অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও এমন বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করছে।
রবিবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে বিদ্যালয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে একটি একতলা এবং একটি দ্বিতল ভবন। প্রবেশদ্বারের পাশেই শহীদ মিনার। বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে বেয়ে নামছে লতা-পাতা। শ্রেণিকক্ষের বারান্দা, অফিসকক্ষ সবুজ গাছে ভরপুর। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই নজরে পড়ে ঝুলন্ত লতা। ছাদে দেখা মেলে পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যালেণ্ডুলা, পেঞ্জি, স্টক, এস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, গ্যাজানিয়া, এনকা গাদা, ফ্লক্স, হলিহক, বারোমাসি ফুল, নীলমনি লতা, গোল্ডেন শাওয়ার, সিলভার কুইন, জারবেরা, রুবেলিয়া, রুসেলিয়া, কৈলাস সুন্দরী, মানি প্ল্যান্টসহ নানা রকম ফুল গাছের। একই সঙ্গে রয়েছে বারমাসি কাঁঠাল, কাটিমন আম, লেবু, কুল (বরই), সবেদা, বেল, কলা, কামরাঙা, আনার, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন, আমড়া, লাউ, ক্যাপসিকাম, লেবু, সাদা এলাচসহ বিভিন্ন প্রকারের ফলগাছ।
ছাদবাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শেষে বাগান পরিচর্যা করছে তারা। তীব্র রোদে মূর্ছা যাওয়া গাছগুলোতে পানি দিচ্ছে।
তারা জানায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এ ছাদবাগান পরিচর্যা করে। নিয়মিত পাঠ্যসূচিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বাইরে একটি পাঠ এই ছাদবাগানে বসে পড়ান শিক্ষকরা। সেখানে প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পালাক্রমে এক দিন করে বাগানে থাকা ফল ও ফুলগাছের সঙ্গে পরিচয় করানো হয়।
তারা বলে, আমাদের খুবই ভালো লাগে এত সুন্দর একটি বাগান দেখে। আমরা রোজ পাঠ শেষে ছাদে বসে খেলাধুলাসহ ফল-ফুলের গাছপালা নিয়ে চর্চা করি।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আজ বিদ্যালয়টিতে এত সুন্দর একটি ছাদবাগান তৈরি হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েই বাগান পরিচর্যা করেন। বিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষায় এটি বড় ভূমিকা রাখছে। বাগানের কিছু টব কেনা হলেও বেশিরভাগ টব আমাদের তৈরি করা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রায় বলেন, ‘বহুদিন থেকে চেষ্টা করছি দৃষ্টিনন্দন একটি বাগান করতে। কিন্তু বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় এতদিন তা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দ্বিতল একটি নতুন ভবন হওয়ার পর সেই ভবনের ছাদেই গড়ে তোলা হয় স্বপ্নের সেই ছাদবাগান। বর্তমানে বাগানে ৩০০ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এবং সহকারী শিকক্ষদের প্রচেষ্টার ফল এই ছাদবাগান। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাদে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন করে পাঠদান করা হয়। সেখানে প্রকৃতি, জীব ও বৈচিত্র্য সম্পর্কে জ্ঞানদানসহ বিভিন্ন গাছের সঙ্গে তাদের পরিচিত করিয়ে দেওয়া হয়।’
ছাদবাগান সম্পর্কে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা ভূঁইয়া বলেন, ’উপজেলার ১০৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২নং বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে আমি অভিভূত। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে ছাদবাগান। তবে বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরটি এক বাক্যে সেরা। তাদের ছাদবাগানসহ পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। তাদেরকে দেখে অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ‘বর্তমান কৃষিতে ছাদবাগান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেহেতু কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং শহর অঞ্চলে ছাদবাগানগুলো খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। ছাদে মানুষ ফলমূলসহ সবজি চাষ করছে। ঠিক তেমনি বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মনোমুগ্ধকর ছাদবাগান করা হয়েছে। বাগানটি পরিদর্শন করেছি। বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ছাদবাগানের পজিটিভ দিক হলো, বাচ্চারা গাছপালা লাগাতে উৎসাহিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির খুবই ভালো উদ্যোগ এটি। আমরা এটি সবখানে প্রচার করছি।’