প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৮ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:১৪ পিএম
পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও বৃত্তি পাওয়ায় সমালোচনার মুখে চার ঘণ্টা পর ফল স্থগিত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তারা বলছে, সফটওয়ারে ভুল হওয়ায় ফল স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফল ঘোষণার পর বিকেলে ই-মেইলে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফল প্রকাশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আগামীকাল বুধবার দুপুরে পুনরায় ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অধিপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ফল স্থগিত করা হলেও যারা বৃত্তি পেয়েছে তাদের ফল পরিবর্তন করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
দুপুরে ফল প্রকাশের পররপই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোরক মণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব আলী, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মিথিলা আক্তার মারিয়াসহ কয়েকজন পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ‘পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পেয়েছে এই বিষয়টি নজরে আসলে আমরা তা খতিয়ে দেখে সত্যতা পাই। পরে অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত করেছি। এছাড়া বিষয়টি কীভাবে ঘটল তা যাচাই করার জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এদিকে বিকেলে ডিপিইর মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক বৃত্তি ২০২২-এর ফল পুনরায় যাচাইয়ের প্রয়োজন হওয়ায় স্থগিত করা হলো। বুধবার পুনরায় এই ফল প্রকাশ করা হবে।
কী ধরনের কারিগরি ত্রুটি ছিল তা জানতে চাইলে ডিপিইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তর কুমার দাশ বলেন, ‘সফটওয়্যারে কিছু কোডিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে কারণে ফলাফলের তালিকায় কিছু ত্রুটি দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত ফল অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে। তবে প্রকাশিত ফলাফলে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি বা বড় ধরনের কোনো ভুল ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। ফল স্থগিত হলেও যারা বৃত্তি পেয়েছে তাদের ফল পরিবর্তন করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কোডিংয়ের সমস্যার কারণে এই ফল স্থগিত করা হয়েছে। যারা বৃত্তি পেয়েছে তাদের ফল পরিবর্তন হবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালায়কে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত। সংবাদ সম্মেলনে এবার সারা দেশের সাড়ে ৮২ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে ৩৩ হাজার। ২০১৯ সালে ছিল ২২ হাজার। এবার সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী, যা আগে ছিল ৩৩ হাজার।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপজেলা/থানার প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা/থানা কোটা নির্ধারণ করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বণ্টন করা হয়েছে। সাধারণ বৃত্তি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক দেওয়া হয়েছে। এ বছর সাধারণ থেকে বৃত্তির ক্ষেত্রে ৮ হাজার ১৪৫টি ইউনয়িন/পৌরসভা ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ছয়টি (৩ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী) হিসেবে ৪৮ হাজার ৮৭০টি এবং অবশিষ্ট ৬০০টি বৃত্তি হতে প্রতিটি উপজেলা/থানায় একটি করে ৫১৩টি উপজেলা/থানায় ৫১৩টি সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এবার বৃত্তি পরীক্ষায় ৫ লাখ ৩৯২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করে। পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪ লাখ ৮২ হাজার ১০৪ জন। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩০০ টাকা এবং সাধারণ গ্রেডে ২২৫ টাকা করে বৃত্তি পাবে। এছাড়া উভয় গ্রেডের শিক্ষার্থী বই কেনার জন্য এককালীন ২২৫ টাকা পাবে।