বাকৃবিতে আবাসন সংকট
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৪ পিএম
এভাবেই গণরুমে থাকতে হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রবা ফটো
‘এক বেডে দুজন করে থাকি আমরা। প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় নতুন ছাত্রীহলে এভাবে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় আমাদের। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, এক বছর পর এভাবে থাকতে হবে না। কিন্তু এখনও আমাদের কোনো হলে আলাদা সিট দেওয়া হয়নি।’ বলছিলেন নতুন ছাত্রীহলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া। শুধু তাকে নয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক ছাত্রীকেই এভাবে আবাসিক হলে থাকতে হচ্ছে। থাকতে হচ্ছে গণরুমে।
তীব্র এই আবাসন সংকটের কারণ, প্রতিবছর ছাত্রী ভর্তির পরিমাণ বাড়লেও নতুন কোনো হল স্থাপন করা হচ্ছে না বাকৃবিতে। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমান এ বিশ্ববিদ্যালয়ে; কিন্তু ছাত্রদের জন্য নয়টি হল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র ছয়টি। ছাত্রীরা অভিযোগ করছেন, আবাসন সংকটে তাদের লেখাপড়ার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ছাইফুল ইসলাম জানান, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫ দশমিক ৭১, ৪৫ দশমিক ৩৫, ৫৪ দশমিক ৪৭, ৪৭ দশমিক ১৮ এবং ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীসংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
আবাসন সংকট দূর করতে ছাত্রীদের হলগুলোর ডাইনিং, নামাজ ঘর ও কমন রুমগুলোকে পরিণত করা হয়েছে গণরুমে। এসব গণরুমে আসন দেওয়া হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের। তারপরও ছাত্রীদের সিট সংকট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে হল প্রশাসন।
হল নির্মাণে নেই অগ্রগতি
আসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ বছর মেয়াদি ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ছাত্রীদের জন্য দুটি ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট নতুন হল তৈরির কাজ শুরু করে। ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হবে ভবন দুটি। প্রতিটিতে থাকবে ১ হাজার ২০০ আসন। কিন্তু কাজ শুরুর পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নতুন হলগুলোর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সংকট নিরসনে আন্দোলন
আবাসন সংকট নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন সময় ছাত্রীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। গত শনিবারও সিট বহালের দাবিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেগম রোকেয়া হলের সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন হলটির মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, মাস্টার্সের থিসিসের হার্ডকপি জমা দেওয়ার আগেই হলের সিট বাতিল করেছেন হল প্রভোস্ট। আসন সমস্যা সমাধানের দাবিতে গত সোমবার রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেন সুলতানা রাজিয়া হলের প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি হলে সিটের দাবিতে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নতুন ছাত্রীহলের (হেলথ কেয়ারে অবস্থিত) ছাত্রীরা। এই হলের ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, এখানে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। হলের সাধারণ সুযোগ-সুবিধাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য
হলের আবাসন সংকটের ব্যাপারে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. নূরুল হায়দার রাসেল বলেন, ছাত্রীদের সংখ্যানুযায়ী পর্যাপ্ত হল না থাকায় আবাসন সংকট থেকেই যাচ্ছে। সংকট নিরসনে সুলতানা রাজিয়া হলে নতুন উইং তৈরি করা হচ্ছে। রোজী জামাল হল সংস্কারের কাজ চলছে। চলমান কাজগুলো শেষ হলেই নতুন শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করা যাবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, প্রতিবছরই ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আসনের সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নতুন করে দুটি ছাত্রীহল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। হল দুটির কাজ শেষ হলে সিট সংকট কেটে যাবে।