অমর্ত্য সেন লোকবক্তৃতা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৫২ পিএম
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত অমর্ত্য সেন লোকবক্তৃতা ও আলোচনা সভায় সভায় উপস্থিত অতিথিরা। প্রবা ফটো
উন্নয়ন মানে শুধুমাত্র রাস্তাঘাট বানানো নয়। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই রাস্তাঘাটের দরকার আছে কিন্তু উন্নয়নের মূল্যায়ন শুধু রাস্তাঘাট দিয়ে করা যাবে না বলে জানিয়েছেন কোলকাতার ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অচিন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, উন্নয়ন বলতে অমর্ত্য সেন ফ্রিডমের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত অমর্ত্য সেন লোকবক্তৃতা ও আলোচনা সভায় ‘অমর্ত্য সেনের ন্যায্যতার দর্শন ও জননীতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে অচিন চক্রবর্তী এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অমর্ত্য সেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
প্রবন্ধে অচিন চক্রবর্তী বলেন, ‘ফ্রিডমের দিকটি বিবেচনা করে আমরা মূল্যায়ন করি। এখানে ফ্রিডম বলতে স্বাধীনতা বুঝাননি অমর্ত্য সেন। ফ্রিডম বলতে চয়নের ক্ষমতা, অনেকগুলো গল্পের মধ্যে যাতে আমরা কোনো বাধা ছাড়া কোনটাকে চয়ন করতে পারি সেটিকে বুঝিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে নোবেল কমিটি যেই মূল বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন সেটি হলো– সোস্যাল চয়েজ। যাকে সামাজিক চয়েজতত্ত্ব বলা যায়। এটি একটি বিশেষ চর্চার ক্ষেত্র, যেটি অমর্ত্যসেনকে ছাড়া চর্চা করা সম্ভব নয়। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো— ব্যক্তির পছন্দ সামগ্রিক বা সামাজিক পছন্দ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। উন্নয়ন কাকে বলবো আমরা?
ভারতীয় এই গবেষক বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ ন্যায্য সমাজ বলে কিছু বলতে পারবো না। যেটি হতে পারে সমাজে যে অন্যায্যতা রয়েছে সেটি যতটা কমানো যায়। তাহলে সমাজ তুলনামূলক ন্যায্য হবে। অমর্ত্য সেন তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, কোনো পারফ্যাক্ট সমাজের ছবি আমরা তৈরি করতে চাইলে সেটি সম্ভব নয়। এটির দরকার নেই। কেননা অন্যায়গুলো দূর করতে হলে আমাদের কোনো পারফ্যাক্ট সমাজের ইকুয়েশন দিয়ে হয় না। তিনি একটি তুলনাত্মক দর্শনের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছেন। অমর্ত্য সেন বারবার বলেছেন, বেসিক এডুকেশন বা বুনিয়াদি শিক্ষা একটি রাজনৈতিক ইস্যু। কিন্তু বুনিয়াদি শিক্ষার ব্যাপারটি কখনোই রাজনৈতিকভাবে আসেনি। জাপান বা অন্যান্য রাষ্ট্রের উদ্যোগে বুনিয়াদি শিক্ষার বিস্তার সম্ভব হয়েছে অল্প সময়ে। রাজনৈতিক প্রশ্ন হয়ে না ওঠার কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাষ্ট্র নানান চাপে পড়ে কাজ করেছে কিন্তু মূলধারার রাজনীতি থেকে এই চাপটি আসেনি।’
অমর্ত্য সেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ। তিনি বলেন, ‘অমর্ত্য সেনের অর্থনীতিবিদ হিসেবে যতটা জানি দার্শনিক হিসেবে আমরা ততটা জানি না। দর্শনে তার যে অবদান, তার যে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তার সঙ্গে আমাদের পরিচয় কম। আমি আশা করবো, আমাদের আজকের প্রজন্মের তরুণরা অমর্ত্য সেনকে পাঠ করবে। আমাদের এই সমাজে যে ব্যাপক নিষ্ঠুরতা, হানাহানি ঘটছে সেখানে অমর্ত্য সেনের চিন্তা, তার বই, তার দার্শনিক অনুজ্ঞাকে লালন করতে না পারলে আমাদের গুণগত উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা জাগবে না।’