সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১৪ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:২২ পিএম
শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার মানসিকতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসার মানসিকতা পরিহার করা সবার জন্যই মঙ্গলজনক। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন মেনে চলবেন। নিজেদের ইচ্ছে আর সুবিধামতো বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না।
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ভারতের কৈল্যাস সত্যার্থী। বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, উপাচার্য প্রফেসর ড. এইচএম জহিরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেখ মামুন খালেদ, উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রিদওয়ানুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা কৈলাস সত্যার্থী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখার পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত না করে জ্ঞান বিতরণ এবং একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, প্রাাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হোক সেটা চাই না। আবার এটাও চাই না যে, শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রির নামে সার্টিফিকেট বিতরণ করে যাচ্ছে। অনেকে গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা খুলে বসেছে।
তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক অগ্রযাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন এবং বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। গুণগত মান ছাড়া উচ্চশিক্ষা মূল্যহীন। তাই উচ্চশিক্ষা যাতে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার সঙ্গে কর্মের সংযোগ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে হয়তো শিক্ষার্থীর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি নিজস্ব ক্যাম্পাস ও অবকাঠামো নির্মাণেও পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন রাষ্ট্রপতি। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিতে এই শিক্ষার্থীদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে জতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে লালন করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় সমৃদ্ধ হয়ে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা উন্নত জাতি তৈরির মহান কারিগর। আপনাদের হতে হবে নৈতিকভাবে বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী, নিরপেক্ষ, অকুতোভয় ও সত্যবাদী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে বহির্জগতের জ্ঞানভান্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নিজেকে কর্মবীর ও জ্ঞানী করে তোলাই হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য। সদাচরণ আর সদালাপ হচ্ছে শিক্ষা জীবনের ভূষণ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারের কোন বিকল্প নেই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যানো টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো মাথায় রেখে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে।
সমাবর্তন বক্তা নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থী বলেন, ‘আপনাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে, যেকোন ভালো কাজের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। হয়তো কোনো একদিন এই কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশেরই এক ছাত্র নোবেল বিজয়ী হবে। আমি সেদিন নিজে আসব বিজয় উৎসবে অংশ নিতে।’
অনুষ্ঠানের ‘গেস্ট অব অনার’ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। নিজের বক্তব্যে তিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বর্তমান সরকার নানা শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে শিক্ষার হার প্রশংসনীয়ভাবে বেড়েছে।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।