জাবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:২৪ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৪ পিএম
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো চালু করা সাপেক্ষে পুরোনো হলগুলোতে গণরুম না রাখার ঘোষণা দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় নতুন হলগুলো এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। ফলে কয়েক দফায় প্রথম বর্ষের (৫১তম ব্যাচ) ক্লাস শুরুর সময়সূচি পিছিয়ে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে।
সোমবার থেকেই নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন। তবে অব্যবস্থাপনা ও অছাত্রদের দাপটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয় গণরুমে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম কয়েক দফায় গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অভিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবীন শিক্ষার্থীরা হলের কমন রুম, ডাইনিং রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন। সেখানে একজনের জায়গায় তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুম ছেড়ে ‘মিনি গণরুমে’ উঠেছেন। সেখানে তারা দুজনের রুমে ছয় থেকে আটজন এবং চার জনের রুমে ১৪ থেকে ১৬ জন থাকছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলগুলোতে ৪৩ ও ৪৪ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। আবার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৪২ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরাও হলে থাকছেন। অন্যদিকে, নবনির্মিত দুটি হল চালু করা হলেও সেখানে নবীন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে আবেদনের ভিত্তিতে পুরাতন শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক প্রান্ত বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর ক্লাস শুরু হয়েছে। সত্যিই অনেক আনন্দের অনুভূতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় এসেছি জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন প্রথমেই হোচট খেলো গণরুমে এক রাত থাকার পর। এরপরে আশাবাদী পরিস্থিতি মানিয়ে জীবনের উদ্দেশ্য পূরণের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইসহাক উদ্দিন বলেন, ‘অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছি। কিন্তু এখানে এসে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি। গত ৬ মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেনেছি জাহাঙ্গীরনগরে আর গণরুম থাকবে না। কিন্তু এখানে ভিন্ন চিত্র। যাই হোক ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিরাপদে সম্পন্ন হোক সে প্রত্যাশা করি দায়িত্বশীলদের কাছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলোতে প্রশাসনের বিন্দুমাত্র কর্তৃত্ব নেই বললেই চলে। যেটুকু রয়েছে তা হলো স্বাক্ষরদান ও অফিস পরিদর্শন। এ ছাড়া আসন বরাদ্দ ও শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত কোনো কাজে শিক্ষকরা তদারকি করেন না। তবে মেয়েদের হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও হল প্রশাসনের পর্যাপ্ত কর্তৃত্ব রয়েছে।’
প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি বলেন, ‘নতুন হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উঠানো হয়নি। তবে শিগগিরই নবনির্মিত অন্য চারটি হল চালু করে আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের উঠানো হবে। সেখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া, হল থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার জন্য সবগুলো হলের প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বের করতে পারলে এবং নতুন হলগুলো চালু হলে গণরুম সংকট নিরসন হবে।’