বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:১২ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২৮ পিএম
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে এক সহকারী প্রক্টরকে তার দায়িত্ব পালনকালেই লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৯টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে লাঞ্ছনার শিকার হন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর অমিত মজুমদার।
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্তরা হলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী। ঘটনাটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলছেন এনায়েত উল্লাহ।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কুবির কয়েকজন নেতাকর্মীর অবস্থানকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে দুই পক্ষকে নিয়ে হলের প্রাধ্যক্ষকের কক্ষে আলোচনায় বসেন প্রক্টরিয়াল বডি ও হল প্রাধ্যক্ষ। আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা উত্তেজিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করলে ঘটনা সামাল দিতে এগিয়ে যান প্রক্টরিয়াল বডি। এ সময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তকে ‘তুই’ সম্বোধন করে মারতে তেড়ে যান শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী। এ সময় অন্য শিক্ষকরা শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের দিকেও তেড়ে যান তারা।
অভিযোগ উঠেছে, এ সময় শিক্ষকদের উপর আরও চড়াও হন কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজী, একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিফাত আহমেদ।
ভুক্তভোগী সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত অভিযোগ করেন, ‘এখানে আমরা প্রক্টরিয়াল টিম দ্বায়িত্ব পালনকালে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। দুই পক্ষের উত্তেজনা থামাতে গেলে আমাকে লাঞ্চিত করা হয়।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি এরকম কিছুই করি নাই। স্যার আমাদের দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। সেখানে অনেকেই ধাক্কাধাক্কি ও আওয়াজ করছিল। স্যার হয়তো ভুল বুঝেছে তাই অভিযোগ করেছে। স্যারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব।’
অপর অভিযুক্ত সালমান চৌধুরী বলেন, ‘এগ্রেসিভ মুডে স্যারের সঙ্গে কথা বলা যাবে না? আমি যদি বলি স্যার আমাদের মারতে আসছেন? সবকিছু পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আর স্যার যদি বলে থাকেন আমরা মারতে গিয়েছি এটা উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘সহকারী প্রক্টর হিসেবে যেকোনো জায়গাতে ভূমিকা রাখার জন্য উনি ধমক দেয়াটাই স্বাভাবিক। এটা ওনার রাইট ছিল। পোলাপান না বুঝতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। মারতে যাওয়া ভিত্তিহীন। তার পরেও যারা স্যারের সঙ্গে উচ্চ বাক্য করছে আমরা ব্যক্তিগতভাবে স্যারের সঙ্গে এদেরকে স্যরি বলার ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা সব হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিলে বসব। তারপর আমরা তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব। আর অছাত্র কেউ হলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যারা হলে থাকবে তাদের প্রত্যেককে ছাত্র এবং এলটেড হতে হবে।’
প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের সবার সামনেই ঘটেছে। অনেক ভিডিও রয়েছে। আমরা তথ্য প্রমাণ সব যাচাই করে ঘটনায় কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’