বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:২৪ পিএম
২০২৫ সাল থেকে পোল্ট্রি রপ্তানি শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশের (পিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপাত্র ডা. এন.সি. বণিক।
তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত মাংসের ৫০ ভাগ আসে পোল্ট্রি থেকে। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই কোনো না কোনোভাবে মাংস উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত; যার ৪০ ভাগই নারী। ৯০’র দশকে দেশে পোল্ট্রিতে বিপ্লব হলেও গত ৩০ বছরে যথাযথ বিকশিত হয়নি। যার কারণে পোল্ট্রি রপ্তানির মুখ দেখছে না।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি কনভেনশন ২০২৩’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
‘নিরাপদ প্রোটিন-সুস্বাস্থ্যের সোপান’ স্লোগানকে সামনে রেখে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দেশের ৭০০ ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বড় খামারি অংশগ্রহণ করেন। এতে খামারি এবং পোল্ট্রি শিল্পে সমস্যা, সম্ভাবনা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা।
দুই দিন ব্যাপী কনভেনশন ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, ইউনিডো বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. জাকি উজ জামান এবং পিপিবির উপদেষ্টা ডা. মোছাদ্দেক হোসেন।
ডা. এন.সি. বণিক বলেন, বর্তমানে দেশে প্রাণিসম্পদের ১৭টি উপখাতে মোট ৮৪ হাজার পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। পর্যাপ্ত ল্যাব, রিসার্চ এবং বিপণন ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এখনই রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২০২৫ সালে সফলতার সঙ্গে রপ্তানি করা যাবে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শহিদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের তাপমাত্রায় গমের এবং সয়াবিনের উৎপাদন তেমন সম্ভব না। এটি মাথায় রেখে সামনের পরিকল্পনা নিতে হবে। অন্যদিকে মাথাপিছু জমির পরিমাণও কমছে। এতসব বাধা মোকাবেলা করে গম ও সয়াবিনের উৎপাদন বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং। এজন্য খামারিদের বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, দেশে পোল্ট্রি খাদ্যের চাহিদা ৭০-৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬০ ভাগই লাগে ভুট্টা , আর সয়াবিন কেক প্রয়োজন হয় ২০ ভাগ। এগুলো কিনতে বিশাল পরিমাণ টাকা গুনতে হয় খামারিকে। এর মধ্যে লাফিয়ে বাড়ছে পোল্ট্রি ফিড ও ওষুধের দাম। ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজারদর মিলিয়ে মুনাফা অর্জন তো পরের ব্যাপার বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতেই হিমিশিম খাচ্ছেন অনেক খামারি।
তিনি বলেন, আমরা শুধু ভোক্তাদের কথা চিন্তা করি। খামারিদের কথা চিন্তা করিনা। একজন খামারি কি পরিমাণ বিনিয়োগ করছে, খরচ কত হচ্ছে, দাম কেমন পাচ্ছে এসব নিয়ে কেউ চিন্তা করি না। ১৬০০ টাকায় এক কেজি ইলিশ কিনে খেতে আমাদের কোন অভিযোগ না থাকলেও ডিমের দাম ১ টাকা বেড়ে গেলেই আমরা নড়েচড়ে উঠি। একটা ডিম উৎপাদন করতে ১০ থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। মুরগি উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৫০ টাকা। কিন্তু সে ডিম যদি মার্কেটে ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে হয় তাহলে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ফিডের মূল উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিন দেশে চাষ বাড়াতে সময় লাগবে। এর ফলে উচ্চ মূল্যের ফিড কিনতে না পেরে যেন বর্তমান খামারিরা ঝরে না পড়েন এ জন্য সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা চিন্তা করতে হবে। আর যারা খামার শুরু করেও পিছু হটতে বাধ্য হয়ছেন তাদেরকে প্রয়োজনে কম সুদে ব্যাংক ঋণ দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশা করছি। খামারিদের হেনস্থা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে তাদের সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক বেগ বলেন, বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের কোনো সঠিক তথ্য নেই। কতগুলো বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে আর কতগুলো প্রয়োজন হচ্ছে এর কোনো সঠিক হিসাব কারো কাছে নাই। কারণ দেশে পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা মনিটরিং বডি নেই। দ্রুত মনিটরিং বোর্ড তৈরি করে মাঠ পর্যায়ে রিসার্চের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যাইয়ে পৌঁছাতে হবে।
শেকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. লাম ইয়া আসাদ বলেন, প্রান্তিক চাষিরা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর আগেও দেশে লাখ প্রান্তিক খামারি ছিল; যেটি বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ হাজারে নেমেছে। আমাদের মোট ডিম উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশই আসে প্রান্তিক পর্যায় থেকে। তাদের নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবা উচিত।