প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম
শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফটো সংগৃহীত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে নীতিমালাটি শিগগির চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হবে না।
খসড়া নীতিমালায় মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক, সাইবার, সেক্সুয়াল, জাতিগত নামের ছয় ধরনের বুলিংয়ের কথা সংজ্ঞায়িত করে এর সঙ্গে জড়িত হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গভর্নিং বডির সদস্যদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, অভিযোগ বাক্স রাখা এবং ক্যাম্পাসে অ্যান্টি-বুলিং ও অ্যান্টি-র্যাগিং দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বুলিংকারী এবং ভিকটিম উভয়কেই কাউন্সেলিং করা উচিত বলেও মত দিয়েছে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং প্রতিরোধ শীর্ষক নীতিমালাটি চূড়ান্ত করতে আরও এক বা দুটি বৈঠকের প্রয়োজন।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, শিস দেওয়া, হুমকি দেওয়া এবং এ ধরনের কথা ও অঙ্গভঙ্গি মৌখিক বুলিং হিসেবে ধরা হবে। পেটানো, থাপ্পড়, লাথি, ধাক্কা, ঘুসি এবং অন্যের গায়ে থুথু দেওয়ার মতো ঘটনা হবে শারীরিক বুলিং। ব্যঙ্গ করে সামাজিক স্ট্যাটাস দেওয়া, কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাত তুলে কথা বললে হবে সামাজিক বুলিং।
বন্ধুদের মধ্যে কারও সম্বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটু লিখে বা অশালীন কিছু পোস্ট করে তাকে অপদস্থ করা হবে সাইবার বুলিং। ইচ্ছাকৃতভাবে আপত্তিজনক স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে জামা-কাপড় খুলে নেওয়া বা খুলতে বাধ্য করা, শরীরে পানি বা রঙ ঢেলে দেওয়া হবে সেক্সুয়াল বুলিং। জাতি, বর্ণ, গোত্র, ধর্ম, পেশা, গায়ের রঙ, অঞ্চল ইত্যাদি নিয়ে কাউকে অপমান ও হেয় করা হলে তা হবে জাতিগত বুলিং। এ ছাড়া বাকি সব বুলিংকে অন্যান্য বুলিং হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, বুলিং প্রতিরোধে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আলাদা কমিটি করবে। কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং অপরাধ প্রতিরোধে অভিযোগ বাক্স রাখবে। শিক্ষার্থীরা বুলিংয়ের শিকার হলে অভিযোগ বাক্সে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দেবে। নিয়মিত সভা করে এ-সংক্রান্ত মনিটরিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে কমিটি। বুলিংয়ের দায়ে কাউকে বরখাস্ত বা বহিষ্কার করা যাবে।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী বুলিং করেন, তাহলে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কারণ দর্শানোর নোটিস জারির মাধ্যমে তাদের মাসিক পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) সুবিধা স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে বাতিল করা যেতে পারে। আর উপযুক্ত কারণ দর্শানো সাপেক্ষে নন-এমপিওভুক্তদের স্থায়ী/অস্থায়ীভাবে অপসারণ-বরখাস্ত করা যাবে এবং ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় দায়ী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।
র্যাগিং-বুলিংয়ে শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অপরাধের ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তাদের বিধিমালা অনুযায়ী সাময়িক ও স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবে। এ ছাড়া গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং/অ্যাডহক/বিশেষ কমিটির কোনো সদস্য প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলে বোর্ড কর্তৃক তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অপসারণ করা যাবে অথবা সংশ্লিষ্ট কমিটি বাতিল করা যাবে।