প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৪ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম
রবিবার বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতের আয়োজনে যোগ দেন কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার শিক্ষকেরা। প্রবা ফটো
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার শিক্ষকদের যোগ দেওয়ার সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। উপজেলাগুলোর ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বউভাতে শিক্ষকদের যোগদান, বাধ্যতামূলক চাঁদা তুলে উপহার দেওয়া ও প্রতিমন্ত্রীর সেটি গ্রহণের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
টিআইবি বলেছে, প্রতিমন্ত্রীর দৃশ্যত নির্দেশনামূলক নিমন্ত্রণে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের যোগসাজশে বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বউভাতে অংশগ্রহণের ঘটনা দেশের শিক্ষা খাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। এ ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি টিআইবি এসব কথা জানিয়েছে। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের আচরণকে শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষকতা পেশা ও শিক্ষার্থীর প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতার অরুচিকর লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকবৃন্দের কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকেরা নিজেদের তিন দিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কি-না সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখার প্রয়োজন রয়েছে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে উপহার প্রদানের এই ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজশ না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারত না, তা-ও খুব সহজেই বোধগম্য। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যাক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখা কী? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যত-ই বা কী? সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখাসহ প্রকাশ করা।’
রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।
তারা জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বউভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছুটি দিয়ে রৌমারী শহরে প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে যান শিক্ষকেরা। ওই তিনটি উপজেলার ২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি থেকে এই ছুটি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। তিনটি উপজেলার মোট ১ হাজার ৩০০ জন শিক্ষক বউভাত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এজন্য তাদের বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। সেই টাকায় নববধূ ও বরের জন্য সোনার আংটি, রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং মেশিন উপহার দেওয়া হয়েছে। বউভাত অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে তিনটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাত অনুষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নেন। এতে ১৫টি গরু, সাতটি খাসি ও মুরগির মাংসের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই ভাত না খেয়ে রুটি–চা খেয়ে ফেরত এসেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিলমারীর অষ্টমীর চর ইউনিয়নের এক শিক্ষক বলেন, ‘তিনটি উপজেলার শিক্ষক এক হাজারের বেশি। ১৫টি ইউনিয়নের নেতাকর্মী প্রায় চার হাজার ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। অনেকেই দাঁড়িয়ে খাবার গ্রহণ করেন, আবার অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে বাজারে রুটি–কলা খেয়ে ফেরত এসেছেন।’