× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘অসাম্প্রদায়িকতা শুধু মুখে নয়, অন্তরেও ধারণ করতে হবে’

ঢাবি সংবাদদাতা

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৪৮ পিএম

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মিলনে অতিথিরা। ছবি: প্রবা

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মিলনে অতিথিরা। ছবি: প্রবা

ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতার কথা কেবল মুখে না বলে চর্চা করার ওপরে গুরুত্ব দিয়েছেন সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ধর্মের পবিত্র বাণীগুলো কেবল মুখের বুলি হিসেবে না আউড়ে তা অন্তরে ধারণ করতে হবে। বিশ্বাসের সঙ্গে পালন করতেও হবে। তাহলেই বিশ্বব্যাপী সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। 

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সম্প্রীতি সম্মিলনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই সম্মিলনের উদ্বোধন করেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশে’র আহ্বায়ক পীযূষ বন্দোপাধ্যায়। সম্মিলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ধর্ম আগে আসে, তারপর শাখা-প্রশাখা। আমরা মূল বিষয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। মূল শব্দ ধর্মের মূল্যবোধের ওপর জোর দিলে ধর্মীয় উগ্রতাবাদের মতো শব্দ আসত না। ধর্মীয় ঐতিহ্য আরও বিস্তৃত একটি বিষয়। যে ব্যক্তি নিজের ধর্মের প্রতি অনুরক্ত, নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তিনি অন্যের ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হন। পাকিস্তানিদের কাছে বাঙালি শব্দটিই ছিল সবচেয়ে বেশি অগ্রহণযোগ্য। তারা ধর্মের ঢাল দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করত। সে কারণে পাকিস্তানিদের বলা হত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। তারা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে।’ 

তিনি বলেন, ‘বিশ্বসভ্যতায় যা কিছু মহান, যা কিছু অর্জন হয়েছে, তা ধর্মকে আবর্তন করে নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধকে উপজীব্য করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এবং দেশের সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে সকল অপশক্তিকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিকে অব্যাহত রাখতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।’ 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আউয়াল হাওলাদার বলেন, ‘সম্প্রীতির শুরু হয় পরিবার থেকে। তারপর যায় প্রতিবেশীর কাছে, সমাজে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার অনেক সমস্যাকে সূচনাকেই প্রতিরোধ করে। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার মুচকি হাসি। এজন্য সকল ধর্ম ভালো ব্যবহারের কথা বলে। মানুষের কল্যাণ করার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই।’ 

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আলোচনায় উঠে এসেছে সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা, ষড়যন্ত্র হয়। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সারাদেশ ঘুরে, তৃণমূল মানুষের সঙ্গে মিশে আমরা দেখেছি এদেশের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ তারাই, যারা অসাম্প্রদায়িক। তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। অসাম্প্রদায়িকতার কথা কেবল মুখে বললে হবে না, এটি চর্চা করতে হবে। চর্চা মানে কেবল বারবার বলা নয়। ধর্মের যে পবিত্র বাণীগুলো আমরা বলি তা কেবল মুখের বুলি হলে চলবে না। এ বিষয়গুলো অন্তরে ধারণ করতে হবে, বিশ্বাসের সঙ্গে পালন করতেও হবে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাদার তপন ডি রোজারিও বলেন, ‘সম্প্রীতি আমাদের গর্বের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য তুচ্ছ কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ডিজিটাল জগত, পত্র-পত্রিকার সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে আমরা সেসব দেখছি৷ এসব বিষয়ে আমরা সোচ্চার হচ্ছি, নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকল ধর্মের মূল কথা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হলে মানুষ তার প্রাপ্য বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। আমাদের উপমহাদেশ সম্প্রীতির ধারক ও বাহক। আমাদের ৬৫ শতাংশ যুবশক্তি। সম্প্রীতির সহাবস্থানে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের পাঠ কার্যক্রমে, গণমাধ্যমে সর্বধর্মের মর্ম কথা প্রকাশ করতে হবে। আমরা সবাই যেন নিজের ধর্মকে ভালোভাবে জানি ও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকি।’ 

রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বামী দেবধ্যানানন্দ বলেন, ‘আগামীতে যারা দেশের নেতৃত্ব দিবে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই উঠে আসে। তাই আমাদের এসব জায়গায় নজর দিতে হবে। আমরা এমন কাউকে চাই না যারা ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করবে, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কাজে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে। আমরা এমন মানুষ চাই যারা নিজ ধর্মের প্রতি নিষ্ঠা রেখে অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন। জ্ঞানের চেতনা, শিক্ষার চেতনা দিয়ে আমাদের ধর্মগুলোর মধ্যে আপাত বিরোধ বৈষম্য দূর করা সম্ভব।’ 

বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, ‘আমরা এদেশে সম্প্রীতি চাই, শান্তিতে বসবাস করতে চাই৷ আমাদের মানবতার জয়গান গেয়ে যেতে হবে। জন্মের সময় মানুষের মন শান্ত, বিশুদ্ধ থাকে৷ পরে বাহ্যিক প্রভাবে তা কুলষিত হয়। কুলষিত মন মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। আমাদের মানুষ হিসেবে মানবতার জয়গান গেয়ে যেতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য-সচিব অধ্যাপক ড. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা