নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫ ০৯:৫২ এএম
রাজনীতি করতে চাইলে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন, পঙ্কিল রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আনবেন না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরের দিকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন, রিসার্চ ফেয়ার এবং একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে আমি রাজনীতি করব। অবশ্যই আপনি রাজনীতির অঙ্গনে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা আপনি ছেড়ে দেন। কারণ রাজনীতিতে ভালো যোগ্য লোকের দরকার আছে। সেখানেও আপনি সম্মান পাবেন। কিন্ত পঙ্কিল রাজনীতি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আনবেন না। এই হচ্ছে আমাদের আহ্বান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সামনের দিনগুলো রাজনৈতিক সরকার আসবে তারা বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে। কিন্ত সে রাজনৈতিক বিশ্বাস, বিশ্বাসের পর্যায়ে থাকবে। সেই রাজনীতি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনব না। সেখানে আমি সব ছাত্রের প্রতি দায়িত্ব যেটা সেটা আমি পালন করব।’
নিজের শিক্ষকতা জীবনের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি ৪০ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা করেছি। জ্ঞানত আমি কখনো ফাঁকি দেইনি। সব সময় নীতিবান শিক্ষক হিসেবে আদর্শ ধারণ করতে চেষ্টা করেছি, সব সময় পারিনি, কিন্ত করেছি। কিন্ত আমি দেখেছি, আমারই বন্ধু-বান্ধব টিচার্স লাউঞ্জে বসে। তাদের ৩০-৪০টি ক্লাস নেওয়ার কথা। তার মধ্যে তারা ৪-৫টি ক্লাস নিচ্ছে। পরে তারা বাকি ক্লাস নিচ্ছেন না। ছাত্র প্রতিনিধি এসে যখন বলছেন যে ম্যাডাম বা স্যার আপনাদের ক্লাস আছে। তখন বলে বসো গিয়ে, আমি আসছি। আরও ১০-১৫ মিনিট গল্প করে তিনি গেলেন। আবার ক্লাস শেষ হওয়ার ১৫মিনিট আগে তিনি ফিরে আসলেন। এমনও আমরা দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষক রিকোয়েন্টমেন্ট, সেখানে শিক্ষক রিকোয়েন্টমেন্ট হতো না। সেখানে ভোটার রিকোয়েন্টমেন্ট হতো। কাজেই নতুনভাবে আমাকে সব কিছু ঢেলে সাজাতে হবে। আমরা যদি আশা করি আমাদের ছাত্ররা নিয়মিত ক্লাস করবে,আমরা যদি আশা করি তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করবে, ফলে সেই পরিবেশ আমাকে সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে অব্যশই আমাদের শিক্ষকদের যে নীতিবোধ সেটাকেও অনেক সমুন্নত রাখতে হবে। শিক্ষক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, ‘রিসার্চ ফেয়ার এবং একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। যা শিক্ষকদের গবেষণামুখী করবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ামুখী করবে। এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এডুকেশন মডেল নিয়ে ভাবতে হবে। এখন ওবিই এসেছে, স্কিল বেউজড এডুকেশন এসেছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের মোড অব একটিভিটিজ ও টিচিং মেথড আপগ্রেড করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সবাইকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তথা ২০তম বর্ষে পদার্পণের শুভেচ্ছা। অত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আইন প্রণয়নসহ প্রতিষ্ঠাকালীন যাদের অবদান রয়েছে বিশেষ করে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীসহ সকলের অবদান কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি।
এছাড়া নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েক মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নয়নে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম হলো, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং সেল গঠন, পিএইচডি ফেলোশিপ প্রদান ও ছুটি বৃদ্ধিকরণ, প্রকাশনা ও গবেষণায় প্রণোদনা বৃদ্ধি, ডিনস অ্যাওয়ার্ড ও ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন, অ্যানিম্যাল হাউজ প্রতিষ্ঠা, বিদেশি খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোলাবোরেশন, মার্ক টেম্পারিং রোধে ডাবল ব্লাইন্ড কোডিং পদ্ধতি চালু, আবাসিক হল, বিভাগ ও অফিসসমুহে ফার্স্ট এইড বক্স প্রদান ও অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ, নতুন অ্যাম্বুলেন্স ও বাস সংযোজন, যুগোপযোগী ও পরিপূর্ণ তথ্য সংবলিত ওয়েবসাইট চালু, প্রশাসনে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসিআর পদ্ধতি ও শিক্ষকদের ইভ্যালুয়েশন পদ্ধতি চালুকরণ, অ্যালামনাই অফিস প্রতিষ্ঠা। আশা করছি, আগামী দিনে আমরা নোবিপ্রবিকে দেশের জন্য একটি অগ্রগামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এসময় তিনি নোবিপ্রবিতে সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের জন্য হল নির্মাণ ও টিএসসি প্রতিষ্ঠায় শিক্ষা উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, প্রাক্তন উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, নোয়াখালী এর কমান্ড্যান্ট (ডিআইজি) মো. হায়দার আলী খান, বিপিএম, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ, নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুক ও নোবিপ্রবি রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন গোল চত্বরে পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রিসার্চ ফেয়ার উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। উদ্বোধন শেষে তিনি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে রিসার্চ ফেয়ারে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, বিভাগ ও সংগঠনের স্টলসমূহ পরিদর্শন করেন। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ৭০ জন শিক্ষককে ভাইস-চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এবং ৩১ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। এ সময় মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ও সেবা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বিকেলের অধিবেশনে বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা উপস্থাপনা ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও দফতর প্রধানেরা বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।