মেহরাব হোসেন, ববি
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫ ১০:২৫ এএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫ ১০:২৫ এএম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। প্রতিষ্ঠার এক যুগের বেশি সময় পার করলেও গবেষণা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। পর্যাপ্ত গবেষণা পরিবেশ, অবকাঠামো, গবেষণা সামগ্রীর অভাব এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ না থাকায় তাদের গবেষণা কর্ম পিছিয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষকদের গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো বাজেট নেই। এজন্য মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করতে আগ্রহ দেখান না। হাতে গোনা যে কজন শিক্ষার্থী মাস্টার্সে থিসিস করেন অর্থাভাবে অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। মানসম্মত থিসিস করতে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষকদের গবেষণার জন্য ১ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ ছিল। এ ছাড়া পিএইচডি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ৩০ লাখ টাকা বাজেট বরাদ্দ আছে। কিন্তু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পিএইচডির সুযোগ না থাকায় এই অর্থ অব্যবহৃতই থেকে যায়। অন্যদিকে রেগুলার শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য কোনো রকম বাজেট বরাদ্দ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা বিভিন্ন প্রজেক্ট বা থিসিসের কাজ করার সময় প্রায়ই অর্থ সংকটে পড়েন। নিজেদের টাকায় গবেষণা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে নিজের টাকায় গবেষণা শুরু করলেও টাকার অভাবে কাজ থেমে যায়। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ, ডেটা বিশ্লেষণ, সার্ভে পরিচালনা বা জার্নালে প্রকাশনার ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব পকেট থেকে খরচ করতে হয়, যা তাদের পক্ষে বহন করা কঠিন।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত কার্বন ফেস্টে প্রথম হওয়া মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম গবেষণার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে টাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘গবেষণা করার ক্ষেত্রে টাকার সমস্যা আমাদের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক সময় গবেষণার কাজে গিয়ে আমরা অর্থ সংকটে পড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করে, তবে আমাদের জন্য গবেষণার কাজটি অনেক সহজ হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে হলে এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কালচার তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহি করা, অর্থ সহায়তা দেওয়ার কাজটি করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. রহিমা নাসরিন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরা গবেষণার জন্য কোনো বাজেট পান না। শিক্ষার্থীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ও সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অনেক এগিয়ে যাবে।’
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বাজেট থাকে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলা হলেও বাজেট বরাদ্দ হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা গবেষণা করার সময় দেখি যে আমাদের টাকা জোগার করতে হচ্ছে। এটা ভীষণ কঠিন। এ ব্যাপারে উপাচার্য নজর দেবেন বলে আশা করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায় বলেন, ‘এখানে গবেষণার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাজেট নেই। এতে গবেষণা খাত ব্যহত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী থিসিস করেন এনএসটি ফান্ড থেকে কিছুটা সাহায্য পান তারা, সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের যদি সহায়তা করা যায়, তাহলে তারা আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, ‘গবেষণার মান বাড়ানো যায়, তার জন্য গবেষণার সার্বিক বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড এবং বাইরের ফান্ড থেকে বাজেট কীভাবে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।’