শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়
ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১৯:১২ পিএম
আপডেট : ২১ মে ২০২৫ ১৯:১৫ পিএম
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ। দুই বছরের নির্ধারিত সময়সীমা থাকলেও ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেসার্স গোলাম সারওয়ার-হেলাল আহমদ নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হলে ২৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ বছরেও ভবনের লিফট, রঙ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনিকা রায় বলে, শ্রেণিকক্ষ সংকটে তাদের গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হয় এবং খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় খেলাধুলাও বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলমান। কবে আমাদের দুর্ভোগ শেষ হবে জানি না। আরেক শিক্ষার্থী ফাহমিদা মাহমুদ অন্তরা বলে, আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই ২০২০ সালে, তারপর থেকে দেখে আসছি বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ চলছে। এ বছর আমি মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নিচ্ছি। কিন্তু ভবনের কাজ এখনও কাজ শেষ হয়নি। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় গত পাঁচটি বছর অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি এ প্রতিষ্ঠানে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় খেলার মাঠ দখল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পুরোনো একাডেমিক ভবনের কয়েকটি কক্ষে দীর্ঘদিন যাবত নির্মাণ শ্রমিকরা বসবাস করছেন। এতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রমে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। নির্মাণ শ্রমিকরা দিন-রাত স্কুল ক্যাম্পাসে যাতায়াত করায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কথা বলে একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছি। তারপরও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও ভবনটির কাজ শেষ করে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হেলাল আহমদ বলেন, ভবন নির্মাণকাজে আমাদের নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে। পুরোনো টিনশেড ভবন ভাঙতে দেরি, পাইলিং জটিলতা এবং ৪৭ লাখ টাকা কর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্পে দেরি হয়েছে। ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার।
মৌলভীবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রতীশ চন্দ্র সেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতির কারণেই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরও কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে ভবনের কাজ শেষ করে আমাদের বুঝিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৪৭ লাখ টাকা কর্তনের বিষয়টি বিধি অনুযায়ী ইস্টিমেট রিভাইজের সময় নির্ধারিত হয়।