প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ২১:৫৭ পিএম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫ ২২:০০ পিএম
তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যমুনার অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
এছাড়া কর্মসূচিতে পুলিশের ‘হামলার’ বিচার চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। পুলিশের বিচার করতে হবে।’
এসময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। পুলিশের বিচার করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের উপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়া হবে না।’
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছেরে জেগেছে জবিয়ান জেগেছে’, ‘আমার ভাই অনাহারে যমুনা কি করে’, ‘এসেছি যমুনায় যাব না খালি হাতে’, ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব চাই’সহ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যার আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম আন্দোলনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘একজন সাবেক জবিয়ান হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলনে আমি নিজেও অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এভাবে ফ্যাসিস্টরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার সাহস পায়নি। আমরা এই ধরনের আচরণে ফ্যাসিস্টের ইন্ধন আছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। জবি শিক্ষার্থীদের চলমান দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফুল স্টপ হওয়া উচিত। আমি আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে আছি এবং পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।’
আজ বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মৎস ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে লংমার্চটি। কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন।
এতে ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। এর মধ্যে ৪০ জনের মতো শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। গুরুতর আহত ২ জন সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফের আন্দোলনে যোগ দেন।
বেলা ৩টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক-কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এসময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রমনা জোনের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এসময় ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে যান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যায়। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।