বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩৭ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ পাল্টে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করার যথার্থ কারণ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ।তারা বলছেন, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সঙ্গে তারা একমত নন। একই সঙ্গে আগের মতো শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে শোভাযাত্রা আয়োজনের নতুন নিয়মের সঙ্গেও দ্বিমত প্রকাশ করেন তারা।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, ‘এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা নামে উদযাপিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্তে নিয়ে প্রশ্ন রাখছি।’
নাজিফা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামটির মঙ্গল অংশটি সম্পর্কিত করে হাস্যকর কিছু কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এ নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ই আসে ১৯৯৬–এর বৈশাখের তথা এপ্রিলের আরও তিন মাস পরে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে সভায় শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।’
নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সমাধান চাই। আগামীতে প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য বাহাসের প্রয়োজন হলেও আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত আছি।’
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, ‘শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি তৈরি হলে গত মাসের শেষের দিকে আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে সবাই একমতে আসতে পারি। নামটা নিয়ে সেদিন কথা বলি। সেখানে চারুকলার ডিন বলেছেন, তারা চেষ্টা করছেন যেন নাম অপরিবর্তিত থাকে। পরে অজুহাত দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি জানাননি। নাম পরিবর্তনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা যৌক্তিক কারণ জানতে চাই। ছিয়ানব্বই সালে (নাম) পরিবর্তন অন্যায় হলে এটাও অন্যায়।’
মোটিফ তৈরির দায়িত্ব পরিবর্তনের নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত করে তিনি বলেন, ‘চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে এলেও, একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে তা শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাব—দুই ক্রেডিটের কোর্স হিসেবে এটি করা হয়েছে। আমরা এই কারিকুলামের সঙ্গে একমত নই।’
এর আগে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের কথা জানিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, ‘নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন করার চর্চা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন এর নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সে সময়ের ইতিহাস খুঁজলে দেখতে পাবেন, সবার অংশগ্রহণ আরও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। পরবর্তীতে এ নাম পরিবর্তন হয়। এবারের বৃহৎ এ আয়োজনে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা আগের নামটি পুনরুদ্ধার করেছি। এটি কোনো পরিবর্তন নয়, বরং পুনরুদ্ধার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের নামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চাপ ছিল না। ‘মঙ্গল’ শব্দ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিবছরই এ নাম নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। মঙ্গলের ব্যানারের আয়োজন নিয়েও বিতর্কের অভাব ছিল না। গেল বছরগুলোতে এ নামটাকে খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভূখণ্ডে যারা বসবাস করে তাদের যে নামে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে আমরা সে নামেই ফিরে এসেছি।’