আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২৫ এএম
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৮ এএম
‘মেয়েটা ক্লাস নাইনে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়েছে। বছরের তিন মাস শেষ হয়ে গেলেও এখনও বিজ্ঞান বিভাগের কোনো বই পায়নি। এর মধ্যে এক মাস ধরে স্কুল বন্ধ। তার পড়াশোনা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানি না এটা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে, কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।’- এভাবেই সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন মো. আলম নামের রাঙ্গুনিয়ার একজন অভিভাবক। তার মেয়ে উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
বছরের তিন মাস পার হয়ে গেলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনও বই পায়নি। শুধু আলমের কন্যা নয় জেলার প্রায় সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের অবস্থা এটি। দীর্ঘ ছুটির পাশাপাশি সব বই না পাওয়ায় বাড়িতেও পড়াশোনা হয়ে উঠছে না তাদের। ফলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। যদিও চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, চাহিদার শতভাগ বই তারা থানাগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছেন ঈদের আগেই।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে এমনিতে এবার বই এসেছে দেরিতে। আবার দীর্ঘ ছুটির কারণে বই হাতে পাওয়ার পরও বিতরণ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা মোটামুটি মার্চের শেষ দিকে চাহিদা অনুযায়ী সব বই পেয়ে গেছি। বন্ধের আগে কয়েকটি করে বই আমরা দিতে পেরেছিলাম। বন্ধের মধ্যে বাকি বই পেলেও শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানোর সুযোগ ছিল না। এরপরও কিছু কিছু বই বিতরণ করা হয়েছে। যা বাকি আছে স্কুল খুললে সেসব বিতরণ করা যাবে।’
জেলার দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। এখানে ঈদের আগেই শতভাগ বই বিলি করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকরা। সন্দ্বীপের এ কে একাডেমির প্রধান শিক্ষক আমিন রসুল খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০ মার্চের মধ্যে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সব বই পেয়েছি। যেসব শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে বই বিলিও হয়েছে। বাকিদের স্কুল খোলার পর দেওয়া যাবে।’
তবে সঠিক সময়ে বই না পাওয়া ও দীর্ঘ ছুটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় রকমের বিঘ্ন ঘটিয়েছেÑ এর সঙ্গে একমত শিক্ষকরাও। শিক্ষক আমিন রসুল বলেন, ‘বিশেষ করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রথমত, একমুখী শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণি পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীকে এই বছর আবার বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে পড়তে হচ্ছে। দুই বছরের জায়গায় এক বছর সময় পাবে তারা। সেই সময়ের তিন মাস গেল তাদের বই ছাড়া। স্কুলও বন্ধ। বাকি সময়ে তাদের সিলেবাস শেষ করতে হবে। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হয়েছে যদিও তবে এই শিক্ষার্থীরা গ্রুপভিত্তিক পড়াশোনার বেসিক গড়ে নেওয়ার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পাবে না।’
শুধু উপজেলাগুলো নয় মহানগরের স্কুলগুলোতেও এখনও শতভাগ বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। কোতোয়ালি থানার অন্তত তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ বই পাননি তারা। এ ক্ষেত্রে থানা পর্যায়ে সকল বই আসার পরেও থানা শিক্ষা অফিসের খামখেয়ালিপনাকে সব বই না পাওয়ার জন্য দায়ী করেন শিক্ষকরা।
কোতোয়ালি থানার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছাতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হুদা সিদ্দিকী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বেশ কিছু স্কুলে চাহিদার সকল বই দেওয়া যায়নি। অনেক স্কুল নিয়মের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এই বিষয়টি সমাধানে কাজ করছি। যেসব স্কুলে বই বাকি আছে সেগুলো পাঠানো হবে।’ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তিনটি উপজেলা ছাড়া সব জায়গায় শতভাগ বই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে তিন উপজেলা বাকি আছে সেগুলোতেও ক্লাস এইট আর দাখিলের কিছু বই বাকি আছে। বন্ধের কারণে বই বিতরণে কিছু সমস্যা হয়েছে। ছুটি শেষ হলে এটিও সমাধান হয়ে যাবে।’