বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:১৯ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৪০ পিএম
উপাচার্য কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদান। প্রবা ফটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে একদল সাধারণ শিক্ষার্থী।
রবিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদের কাছে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ স্মারকলিপি দেন। উপাচার্য কার্যালয়ে ওই বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদের নেতৃত্বে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অশেষ শুভেচ্ছা নেবেন। দ্বিতীয় স্বাধীনতা পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথম প্রশাসক হিসাবে আপনাদেরকে পেয়ে আমরা আনন্দিত। স্বৈরাচারের ধ্বংস করে রেখে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাঠামোকে নৈতিকতার ভিত্তিতে পুনরায় বিনির্মাণের যে চ্যালেঞ্জ আপনারা নিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন তাতে আমরা সর্বক্ষণ আপনার পাশে আছি।
শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, অভ্যুত্থানের প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমাদের প্রাণের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের কোনো রূপরেখা আমরা আজও পাইনি। এ দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের গড়িমসি আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে ডাকসুর দাবিতে অনেকদিন ধারাবাহিক আন্দোলন করেছি। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যে ইন্সটিটিউশনাল ই-মেইলের মাধ্যমে ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নেবেন। কিন্তু সেটি গ্রহণ করতে প্রশাসনের দুই মাসের বেশি সময় লেগেছে। মার্চের শেষে এসে এ মতামত গ্রহণ করা হয়। আমরা গত আগস্টে শুনেছিলাম, ৩/৪ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হবে। অথচ ৮ মাস পার হওয়া সত্ত্বেও এখনও ডাকসু নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপই আমরা পাইনি। যেখানে রাবি এবং জাবিতে ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে।
ডাকসুর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের এ স্বাধীনতাকে চিরস্থায়ী করতে, পতিত স্বৈরাচারের উত্থান রুখে দিতে এবং নব্য স্বৈরাচার প্রতিরোধ করতে, দেশের মানুষের গণঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, স্থায়ীভাবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশসম্মত ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করতে, লেজুড়বৃত্তিক ভয়াবহ দলীয় ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাস থেকে ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে ও সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করতে ডাকসুর বিকল্প নেই।
ডাকসু নির্বাচন দিতে গড়িমসি করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা ডাকসু নির্বাচনের রূপরেখা চাই। আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কখনও স্মারকলিপি, কখনও বিক্ষোভ কিংবা কখনও প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি করেছিলাম। আজও সেই নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই স্মারকলিপি নিয়ে এসেছি। আমরা প্রশাসনের কাছে আশা রাখব, তারা আমাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে বিলম্ব না করে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। আমরা আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত, জুলাই অভ্যুত্থানে এত রক্ত ঝরার পরও কোনো যৌক্তিক দাবি আদায়ে বার বার আন্দোলন করার প্রয়োজন হওয়াটা দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির চর্চার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ব্যর্থ হয় এবং ডাকসু নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি অব্যাহত রাখে, তাহলে আমরা ডাকসুর দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।