প্রবাসী শিক্ষানুরাগীর চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৫ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষানুরাগী জাফর খিজার। ছবি : সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরের মডেল অনুসরণ করে সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন নীতি গ্রহণ, সরকারি স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবাকে সত্যিকারের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠাসহ বেশকিছু প্রস্তাব রেখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জাফর খিজার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশের যুবসমাজের প্রতি খোলা চিঠি লিখেছেন এই প্রবাসী। গণমাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে তিনি দেশের জন্য নিজের উন্নয়ন চিন্তা থেকে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন।
জাফর খিজার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। জড়িত আছেন শিক্ষা বিস্তার ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞ ও উন্নয়নকর্মী হিসেবে। তিনি আমেরিকার নিউজার্সিতে অবস্থিত পিসি এইজ ক্যারিয়ার ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। সম্প্রতি তিনি রাজধানী ঢাকায় এসে এই খোলা চিঠি লিখেছেন।
‘সম্মানিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের যুব সমাজের প্রতি খোলা চিঠি’ শিরোনামে জাফর খিজার লিখেছেন- ‘বাংলাদেশের ছাত্রদের প্রতি সালাম। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং যারা পরিবর্তনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন; আমরা, যারা এই পৃথিবীকে আরও ভালো করার জন্য সংগ্রাম করছি, আজীবন আপনাদের কাছে ঋণী থাকবো। আসুন, সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
জাফর খিজার মনে করেন, জ্ঞান-শিক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তখনই মূল্যবান, যখন তা পেশিশক্তিসম্পন্ন সুবিধাভোগীদের জন্য নয়; বরং সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য একটি কার্যকর সমাজ গড়তে সাহায্য করে। সত্যিকারের গণতন্ত্রের আহ্বান একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ভিত্তি।
চিঠিতে সংবিধান সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সংবিধান সংশোধন করুন। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের সাহসী যুবসমাজ, যদি আপনারা একটিমাত্র কাজ করতে পারেন, তবে তা হোক দেশের বিদ্যমান সংবিধান সংশোধন। তা সংশোধন করে নিশ্চিত করুন যে প্রতিটি আইন ও নীতি বৃহত্তর কল্যাণের জন্যই হবে। সমৃদ্ধ এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজের মূল ভিত্তি হলো এই নীতি যে, সব সরকারি কার্যক্রম সমাজের এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেবে, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে নয়। এই একক সংশোধন ভবিষ্যতে এমন একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যেখানে ন্যায়, বিচার এবং সুযোগ শুধুমাত্র আদর্শ নয়; বরং প্রজন্মের জন্য সংবিধান নিশ্চয়তা দেবে।’
জাফর খিজারের মতে পরিবর্তনের জন্য মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে থাকতে পারে-
১. সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন নীতি : এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের মডেল অনুসরণ করুন, যেখানে সরকার বেশিরভাগ আবাসিক বাসস্থানের ব্যবস্থাপনা করে, আয়ের ভিত্তিতে সাশ্রয়ী বাসস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করে।
২. সর্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও শিশুযত্ন : প্রতিটি শিশুর জন্য বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও শিশুযত্ন প্রদান করুন। নরওয়ের সমন্বিত মডেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পাঠ্যভিত্তিক শিক্ষার পরিবর্তে দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দিন।
৩. স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার : সরকারি স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে রান্না করা ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করুন, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সহায়তা করবে।
৪. সর্বজনীন বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা : স্বাস্থ্যসেবাকে সত্যিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুন, যা প্রতিটি নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হবে।
৫. আর্থিক সমতা ও উদ্যোক্তা শিক্ষা : আয়-বৈষম্য কমাতে নীতি প্রণয়ন করুন। উদ্ভাবন, আত্মনির্ভরশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ব্যাপকভাবে উদ্যোক্তা শিক্ষা চালু করুন।
৬. সাশ্রয়ী ইন্টারনেট ও পাবলিক হটস্পট : সাশ্রয়ী ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং বিনামূল্যে পাবলিক হটস্পট নিশ্চিত করুন, যা নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করবে ও সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমাবে।
প্রবাসী এই শিক্ষানুরাগী চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সম্মিলিত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতা এবং উদ্ভাবনের একটি বৈশ্বিক উদাহরণে পরিণত করতে পারে। আসুন, আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে একত্রিত করি যাতে বাংলাদেশের যুবসমাজের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয় এবং যারা একটি ভালো আগামীর জন্য লড়াই করেছেন, তাদের ত্যাগের মর্যাদা রক্ষা পায়।’
প্রসঙ্গত, জাফর খিজার যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউজার্সিতে তার প্রতিষ্ঠিত পিসি এইজ ক্যারিয়ার ইনস্টিটিউট মূলত ক্যারিয়ার পরিবর্তনকারীদের জন্য আইটি/সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত কর্মসংস্থানমূলক বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষানুরাগী পেশাগত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি ‘ডু পিস’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা- যা বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ৫০টিরও বেশি কেন্দ্রে প্রতি বছর ১০ হাজারের বেশি শিশুকে বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও (প্রথম–পঞ্চম শ্রেণী) টিউশন সেবা দিয়ে আসছে।