ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৪৫ পিএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০০ পিএম
ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাবেক এক শিক্ষকের গাড়িচাপায় নারীর মৃত্যুর ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নের কথা জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত যানবাহন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল হাতে বিক্ষোভ করেন তারা।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হওয়া নেতারা। এতে সাধারণ শিক্ষার্তীরাও যোগ দেয়।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম আজহার জাফর শাহ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে চাকরিচ্যুত।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ। তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়।
বিক্ষোভ মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্র অধিকারের ঢাবি শাখার সভাপতি আখতার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য সঠিক কোনো নিয়ম মানা হয় না। গাড়ি উল্টোপথে আসতেছে কি না তা দেখার জন্য কোনো নিরাপত্তারক্ষী নেই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব, কিন্তু আজকে যে একজন নারীকে গাড়ির নিচে পিষে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনায় ঢাবি প্রক্টর দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এই হত্যাকাণ্ডের দায় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই নিতে হবে।’
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আদনান আজিজ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকে যে হত্যা হইছে এটাকে একটা ‘হত্যা’ হিসেবে গণনা করতে হবে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং একজন সাবেক শিক্ষকের দ্বারা নারী হত্যা করা হয়েছে। ওই শিক্ষক যদি নারীকে গাড়ির নিচে চাপা পড়তে দেখে গাড়ি থামিয়ে দিতো তাহলে সেটি দুর্ঘটনা হতো, কিন্তু তিনি সেটা করেননি বরং তিনি ওই নারীকে টেনেহিঁচড়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিয়ে যায়। এর হত্যার মনিফ (উদ্দেশ্য) বোঝা যায়। এটা মার্ডার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক এই হত্যা ঘটিয়েছে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে যে আমরা এটার জন্য নিন্দিত ও লজ্জিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরের রাস্তাগুলোতে স্পিড লিমিট লেখা থাকবে। স্পিড লিমিট কেউ ক্রস করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রাস্তা খোলা থাকতে পারে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চলাচল করতে পারে বাকিসব রাস্তা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর রিকশা চলাচল করবে যেগুলোতে ট্যাগ লাগানো থাকবে যে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকশা।’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা বেশ কয়েকটি দাবি জানায়। সেগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসাতে হবে। কোনো প্রাইভেট গাড়ি বা অতিরিক্ত যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং যে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন সেই প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
শুক্রবার বিকেলে ঢাবির টিএসসি এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে ধাক্বা দেয় একটি প্রাইভেট কার। পরে বাইকে থাকা এক নারী গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে ওই নারীকে টিএসসি এলাকা থেকে টেনে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিয়ে যান গাড়িচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিলে ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।