তিতুমীর কলেজ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩২ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:৩৮ এএম
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে অনশন এবং ‘বারাসাত ব্যরিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ১১ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি অনুযায়ী মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে রেলপথ, আমতলী মোড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, মহাখালী-গুলশান সড়ক এবং গুলশান লিংক রোডে সর্বাত্মক অবরোধ করা হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিতুমীর ঐক্যের উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, সোমবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি অব্যাহত থাকবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য তিতুমীর কলেজ শাটডাউন ঘোষণা করা হলো।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার জন্য রবিবার সকাল ১১টা থেকে অবরোধ শিথিল করেছিলাম। সোমবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফের অবরোধ ঘোষণা করছি। এর আওতায় থাকবে মহাখালী, রেল গেট, আমতলী ও গুলশান লিংক রোড। এর আগে আমরা বিশেষ বিবেচনায় কর্মসূচি শিথিল করেছিলাম। কিন্তু সোমবার থেকে আর শিথিল করা হবে না।
মাহমুদুল হাসান মুক্তার বলেন, সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর আমাদের একটি ধারণা হয়েছিল যে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি রাষ্ট্র হবে, যারা শিক্ষার্থীদের কথাগুলো চিন্তা করবে। আমাদের এসব কর্মসূচির জন্য অনেকেই আমাদের ওপর রাগ করে আছেন। আমরা তাদের কাছে ক্ষমা চাই। আমরা আপনাদের সন্তান। রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তিতুমীরে কেউ ঢুকতে পারবে না। সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে কলেজে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে ৩ দফা ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো তিতুমীরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে; শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে; তিতুমীর কমিশন গঠনে আইন উপদেষ্টা বাধা দিয়েছেন, এর তদন্ত করতে হবে। আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ নামে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান অভিমুখের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। ভোগান্তিতে পড়েন জনসাধারণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুলশান ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়।
সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের ‘শিক্ষা উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত, মানি না মানি না’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘তিতুমীর আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘টিসি না টিইউ, টিইউ টিইউ’, ‘আমার ভাই অনশনে, প্রশাসন কী করে’, ‘প্রশাসনের সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, চলবে না চলবে না’, ‘অধ্যক্ষের সিন্ডিকেট, মানি না মানবো না’, ‘আমাদের সংগ্রাম, চলছে চলবে’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তারা এমন প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখার পর রাত ৮টার দিকে অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিল করতে করতে ক্যাম্পাসে ফিরে যান তারা।
শিক্ষার্থীদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক গুলশান বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও গুলশান-মহাখালী সড়কে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার বিকাল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। দাবি পূরণ না হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যান।