বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২৮ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৪৩ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাসে আসন নিয়ে বিরোধের জেরে গত শনিবার মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানসহ অন্তত পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান ও আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শনিবার মোস্তাফিজ স্যার বিষয়টি মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন। তবে সুশৃঙ্খল পরিবেশকে উশৃঙ্খল করে যারা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে, তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করতে চাই না। আমরা কোনো বিভাগের বিরুদ্ধে নই। যদি আইন বিভাগ অপরাধ করে, তাহলে আইন বিভাগ শাস্তি পাবে; আল ফিকহ যদি অপরাধ করে, তাদেরও শাস্তি হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ যদি অপরাধ করে, তাদেরও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক। তবে নিরপরাধ কারও বিরুদ্ধে নয়। একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমান করা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ডাবল ডেকার বাসে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন ও আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবের মধ্যে বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টায় বাসটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাসটি ঘিরে ফেলেন।
ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, আল হাদিস অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দুই বিভাগের কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে ইমার্জেন্সি সভা ডাকেন। প্রক্টর অফিসে সমঝোতা হলেও আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ জানালে অনুষদ ভবনের সামনে অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসার একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীদের মারামারি ঠেকাতে গিয়ে আহত হন। অন্যদিকে আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের পায়ে আঘাত লাগে। এ ছাড়া আইন বিভাগ ও আল ফিকহ বিভাগে শিক্ষার্থীদের কয়েকজন আহত হন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও সিকিউরিটি সেলের কর্মকর্তাদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘বাসের ঘটনার সমাধান উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে করেছি। তবে পরবর্তী মারামারির ঘটনাটি নিয়ে আজ (গতকাল) বৈঠক করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’