জুলাইয়ে হামলা
রংপুর অফিস
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৯ পিএম
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০৩ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ৫৬ শিক্ষার্থীকে এক ও দুই সেমিস্টার করে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন। একই সঙ্গে ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ৩৩ শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টার ড্রপ এবং ২৩ জনকে এক সেমিস্টার ড্রপের সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য জানান, ১০৮তম সিন্ডিকেট সভা শেষে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের আলোকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তা সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে।
দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলাসহ হত্যা মামলার আসামি গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের আসাদুজ্জামান মন্ডলকে গত অক্টোবর সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তাদের সাত কার্যদিবস সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা কর্মস্থলেও আসছেন না। ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়।
শাস্তি পেলেন ৫৬ শিক্ষার্থী
উপাচার্য জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ৭১ শিক্ষাথীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিগত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১৫ জন সাবেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে দুই সেমিস্টার ও ২৩ জনকে এক সেমিস্টার করে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে শৃঙ্খলা বোর্ডের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনসহ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এক শিক্ষার্থীকে অভিযুক্তের তালিকা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আবু সাঈদ হত্যায় মামলা হচ্ছে না
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত সিন্ডিকেটে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বিষয়ে আইনজীবী ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আরেকটি হলে মামলার গতি মন্থর হবে উল্লেখ করে আইনজীবী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন করে আরেকটি মামলা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
উপাচার্য জানান, শিক্ষক সমিতির নিষ্ক্রিয়তা গভীর ষড়যন্ত্রের বিষয় হতে পারে। তাই শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নির্বাচন বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। উপাচার্য জানান, বিগত সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় সেই নীতিমালা তৈরির কমিটি করা হয়েছে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন গঠন করে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হলেও ক্যাম্পাসে কিছু কিছু ব্যানারে কে বা কারা প্রোগ্রাম করছে। শিক্ষার্থীরা যে দলেরই হোক না কেন, কোনো দলীয় ব্যানার বরদাশত করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন রেজিস্ট্রার ড. হারুন-অর-রশিদ, জনসংযোগ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা।