বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৮ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৯ পিএম
প্রতিবছর শীত মৌসুমে বাড়তি উষ্ণতার খোঁজে বিভিন্ন দেশ থেকে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে দেখা মেলে এসব পাখির। দেখা-না দেখা এসব পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে সময় কাটাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অনেক দর্শনার্থী। এই পরিযায়ী পাখিগুলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিনিয়েছে অন্যভাবে।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলার আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। ব্যাতিক্রম হয়নি এবারও। ‘পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন’ স্লোগানকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের পাখিমেলা।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বেলুন উড়িয়ে পাখিমেলার উদ্বোধন করেন।
এ বছরে দিনব্যাপী পাখি মেলায় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত পাখিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া মেলায় পাখি সংরক্ষণে অবদান রাখায় ‘বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড’, ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘সায়েন্টিফিক পাবলিকেশ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।
তবে শীতের যে অতিথি পাখিদের ঘিরে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে, সে পাখিরাই যেন বিলুপ্তপ্রায়। গত ২-৩ বছরে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের উপস্থিতি একেবারেই লক্ষ্য করা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে অপরিকল্পিত নগরায়নে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে এই ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- মাস্টারপ্ল্যানবিহীন যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণ করে পাখির ‘ফ্লাইং জোন’ ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ভবন নির্মাণের শব্দ, লেকের আশপাশে জনসমাগম বৃদ্ধি, লেকের পানির গুণগত মান নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে পাখি চলে যাচ্ছে।
ঢাকার মিরপুর থেকে আগত এক দর্শনার্থী বলেন, আমি প্রতিবারই আমার পরিবারকে নিয়ে পাখিমেলায় আসি। একই সাথে আমার বাচ্চাদের সাথে পরিযায়ী পাখির আগমন উপভোগ করি। কিন্তু এবার লেকগুলোতে কোনো পাখি দেখলাম না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার বলেন, পাখিমেলা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্য। এর মাধ্যমে আমরা সকলের কাছে পাখির সৌন্দর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরতে পারছি। এছাড়াও আপনার লক্ষ্য করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি কমে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারা। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।
পাখিমেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা প্রতিবছর পাখিমেলার আয়োজন করে থাকি। শিক্ষার্থীদের সচেতনতা লক্ষ্যে পাখি নিয়ে নানা আয়োজন থাকে এ মেলায়। বিগত বছরের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো পাখির জন্য অনুপযোগী এবং অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। লেকগুলোতে যথাযথ সংস্কার এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে পাখি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, মানুষের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে সাজেকের মতো জায়গায় দৃশ্যমান অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীসহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতিও বিতাড়িত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও দৃশ্যমান অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি প্রাণীদেরও মূল্য আছে। আমাদের কর্তব্য থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাণীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই।