× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নতুন বইয়ের স্পর্শ ছাড়া থাকবে লাখো শিক্ষার্থী

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৩ এএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৭ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথমদিন স্কুলে স্কুলে ‘বই উৎসব’ করে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ব্যত্যয় ঘটছে এবার। খরচ কমাতে হচ্ছে না বই উৎসব। শুধু বই উৎসব নয়, বছরের প্রথমদিন প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি ছাড়া অধিকাংশ ক্লাসের শিক্ষার্থী দুয়েকটি ছাড়া সব বই হাতে পাবে না। অনেক উপজেলার শিক্ষার্থীদের বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হবে বিষণ্নমনে। তবে এনসিটিবি বলছে, প্রথমদিন বই না পেলেও চলতি মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের কাছে সব বই পৌঁছে দেওয়া হবে। যদিও মুদ্রণকারীরা বলছেন, চলতি মাস তো নয়ই, মার্চের আগে পাওয়া যাবে না সব বই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার বই উৎসব না করে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি বই। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ছাপা শেষে বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য ৭ কোটির মতো বইয়ের ছাড়পত্র পাওয়া গেছে, যা বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই আরও কয়েক লাখ বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ। আর দশম শ্রেণির এক কোটি বই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ছাপানোর কারণে ১০ তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। বাকি বইগুলো ছাপার কাজ দেরি হওয়ার কারণে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনসিটিবি উৎপাদন দপ্তর সূত্র আরও জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছাপা শেষে ছাড়পত্র হয়েছে ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯ হাজারের মতো বইয়ের। এর মধ্যে প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপার কাজ শেষ। তবে এই তিন ক্লাসে ২৭ লটের বই রিটেন্ডার হওয়ায় সেগুলোর ছাপার কাজ শেষ হয়নি। ফলে ১০৫ উপজেলায় বছরের প্রথমদিন প্রাথমিকের তিন ক্লাসের বই যাচ্ছে না। আর চতুর্থ ও পঞ্চমের ছাপার কাজ চলছে। এই দুই শ্রেণির বই গতকাল পর্যন্ত সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। 

উৎপাদন নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবু নাসের টুকু বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ করতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি।

আর মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) বইয়ের সংখ্যা ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার মতো। এর মধ্যে গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২ কোটি ৮২ লাখের মতো ছাড়পত্র হয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিকের ৪৫ লটের বই রিটেন্ডার হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এই টেন্ডারগুলো সম্পন্ন হবে। এছাড়া মুদ্রণকাজ পাওয়া সব প্রতিষ্ঠান এখনও বই ছাপার জন্য চুক্তি করেনি। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকের বই ছাপায় অনেক পিছিয়ে এনসিটিবি। 

এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার বছরের প্রথমদিন মাধ্যমিকের সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে ‍তুলে দেওয়া সম্ভব হবে নাÑ এমন বাস্তবতাকে মাথায় রেখে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বইয়ের ছাপার কাজ সম্পন্নে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই তিন বইও সব শিক্ষার্থীর জন্য প্রস্তুত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কোনো শ্রেণিতে একটি, কোনোটিতে দুটি বই দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো কোনো উপজেলার শিক্ষার্থীরা বই পাবে না বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

মাঠপর্যায়েও একই চিত্র। গতকাল মঙ্গলবার দেশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো কোনো উপজেলায় মাধ্যমিকের একটি, কোনোটিতে দুটি বই পৌঁছেছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় এখন পর্যন্ত একটি বইও পৌঁছেনি। যেসব উপজেলায় বই পৌঁছেছে, তা শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বই না নিয়েই স্কুল থেকে ফিরতে হবে শিক্ষার্থীদের।

এর মধ্যে রংপুর বিভাগের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মাধ্যমিকে এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ বই আসেনিÑ এসেছে ৩৫ শতাংশ। প্রাথমিকে ৪৫ শতাংশ এলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সব বই আসেনি। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই বছরের প্রথমদিনে নতুন বইয়ের স্পর্শ পাবে না।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা প্রায় ৪৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত এসেছে ১১ লাখ ৮৭ হাজারের মতো, যা চাহিদার ২৮ শতাংশের মতো। এর মধ্যে পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালী ও বাঁশখালী উপজেলায় কোনো বই পৌঁছেনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আবদুর রহমান বলেন, এখনও সব বই আসেনি। চাহিদার মাত্র ২৮ শতাংশ এসেছে। আশা করা যায় জানুয়ারির মধ্যে সব বই এসে যাবে।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা বলেন, বই আসা শুরু হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বেশকিছু বই ইতোমধ্যে এসেছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য শ্রেণির বই আসছে। তবে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ চাহিদা ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩ কপি বইয়ের।

রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৮৬ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলার চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত বই পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুসারে, রাজশাহী জেলায় মাধ্যমিক (বাংলা ভার্সন) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৬০ জন। এর বিপরীতে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৫ কপি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র দুটি শ্রেণির জন্য তিনটি করে বই হাতে এসেছে।

বছরের প্রথমদিন বই দিতে প্রথম দফায় টেন্ডারসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার আগের সব টেন্ডার বাতিল করে। শুধু টেন্ডার নয়, নতুন কারিকুলাম বাতিল করে পুরোনো কারিকুলামে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পুরোনো সৃজনশীল কারিকুলামের আলোকে তৈরিকৃত বইগুলো ফের ঘষামাজা করে ঠিক করে এনসিটিবি। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে সপ্তাহখানেক আগে ছাপার কাজ শুরু হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া ও কারিকুলাম সংশোধনের কারণে এবার বই ছাপার কাজ পিছিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মুদ্রণকারী জানান, মাধ্যমিকের কিছু বই ছাপার জন্য চুক্তি করার জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এরপর বই ডেলিভারির জন্য আরও ৪০ দিন সময় পাওয়া যাবে। তাই দ্রুত বই দেওয়ার জন্য তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় দ্রুতই বই দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু ব্যাংক লোন, কাগজ সংকটসহ অন্যান্য জটিলতার কারণে ছাপার কাজ দ্রুত এগোতে পারছেন না তারা।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, সব শ্রেণির শিক্ষার্থী বছরের প্রথমদিনই অন্তত তিনটি করে বই পাবে। জানুয়ারির মধ্যেই সব বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা।

পাঠ্যবইয়ের ‘অনলাইন ভার্সন’ উদ্বোধন আজ

সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে না পারায় এবার বছরের প্রথমদিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি। এছাড়া প্রতিবারের মতো এবার বই উৎসব হচ্ছে না। প্রধান অতিথি হিসেবে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) ড. এম আমিনুল ইসলামসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ১ জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা