বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৮ পিএম
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:১৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
রেজাল্ট না থাকা স্বত্বেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ডাক পেয়েছেন এক প্রার্থী। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত রয়েছে, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। তবে মো. মোবারক হোসাইন নামের ওই প্রার্থীর এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ ৩.৯০; যা নির্ধারিত যোগ্যতার চেয়ে কম।
খোঁজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। যেখানে মো. মোবারক হোসাইন নামের ওই প্রার্থী ২০০৩ সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে পেয়েছে জিপিএ-৩.৯০।
আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০শে নভেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে যেকোনো একটি শর্ত শিথিলের বিষয় উল্লেখ ছিল। তবে মোবারক হোসাইনের আবেদন করা এ বছরের ২৩ অক্টোবরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে শিথিলতার কোনো বিষয় উল্লেখ নেই।
নিয়ম অনুযায়ী যে বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হবে সেই বিভাগ কর্তৃক জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সেই বিভাগের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক মিলে একটি প্ল্যানিং বা বাছাই কমিটি গঠিত হবে। সেই কমিটি প্রাথমিক পর্যায়ে আবেদনকারী প্রার্থীদের যোগ্যতাসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করবেন।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে এবারের প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্ল্যানিং বা বাছাই কমিটিতে বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান, ড. মুহম্মদ আসহান উল্যাহ, সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুব আলম, ড. জি এম আজমল আলী কাওসার এবং মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম।
উক্ত বিষয়ে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্ল্যানিং কমিটি বসে মিটিং করেছি। এটি আসলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। এখন এটি প্রশাসন দেখবে।’
প্ল্যানিং কমিটিতে থাকা ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ আসহান উল্যাহ বলেন, ‘এটা তো চেয়ারম্যান বা রেজিস্ট্রার বলতে পারবে। ক্রাইটেরিয়া ব্যতীত এইখানে আসলে কাউকেই নেওয়া যাবে না। এখন দেখার বিষয় এটি কি প্রিন্টিংয়ে ভুল হয়েছে না-কি অন্যকিছু। তাছাড়া ক্রাইটেরিয়া সম্পূর্ণ না হলে প্ল্যানিং কমিটিও কাউকে নিতে পারে না। ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে এসএসসি, এইচএসসি জিপিএ ৪। সেখানে এর নিচে আসবে কীভাবে? এটা চেয়ারম্যান অনুসন্ধান করে ভুল হয়ে থাকলে শুদ্ধ করে দিতে পারে। এটা কারও উপরই দোষারোপ করে লাভ নেই। হায়ার অথোরিটি ইচ্ছে করলে এটা বাতিল করতে পারে।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘সে পরীক্ষাতে বসবে কি বসবে না এটা তার এখতিয়ার। যখন সিলেকশন বোর্ডে আসবে সিলেকশন বোর্ডের সদস্যরা এনালাইসিস করবে। যদি সে আসে সিলেকশন বোর্ড সবকিছু দেখে শুনে তখন তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
যোগ্যতাই যদি না থাকে তাহলে সে কীভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভুলে একজনের কাছে কার্ড চলে গেছে। তার কার্ডটা তো আমি রোহিত করতে পারি না। বাতিল করার জন্য তিনটা ধাপ রয়েছে। বাছাই বোর্ড, প্ল্যানিং ও সিন্ডিকেট সে যেকোনো একটা ধাপে আটকে যেতে পারে। তাকে আটকানোর আইন আমার হাতে নাই।’
রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘যারা ভুল করেছে তাদেরকে আমি কোয়ারি করতে পারি। আপনারা কেন ভুল করলেন। ওই লোককে আমরা কোয়ারি করতে পারি না।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘এটি আমাদের সিলেকশন বোর্ড দেখবে। বোর্ড যদি দেখে সে (প্রার্থী) কোয়ালিফাই করে নাই তাহলে বাদ যাবে। প্রত্যেক সময়ই আমরা বোর্ডে চেক করি। তবে, প্ল্যানিং কমিটিকে অবশ্যই আমরা শোকজ করব।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে মোবারক হোসাইনের পিএইচডি থিসিসে আপত্তিকর শব্দের ব্যবহার, উইকিপিডিয়া থেকে সরাসরি কপি-পেস্ট করা এবং ইংরেজি ভুল শব্দ ও বাক্যের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল।