প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:২৫ পিএম
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (এসইএলপি) উদ্যোগে বুধবার ঢাকার আলোকিতে অনুষ্ঠিত হয় তারুণ্যের উৎসব। প্রবা ফটো
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল ‘অধিকার এখানে, এখনই’ (আরএইচআরএন) কর্মসূচি আয়োজিত ইউথ ফেস্টিভ্যাল বা তারুণ্যের উৎসব। দিনব্যাপী এই আয়োজনে একই ছাদের নিচে তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে সামাজ পরিবর্তনে যুব সমাজ কী ভূমিকা রাখতে পারে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া ছিল চিত্র প্রদর্শনী, প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। ছিল তরুণ উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যের প্রদর্শনী।
ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির (এসইএলপি) উদ্যোগে বুধবার ঢাকার আলোকিতে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। প্রায় ৩৫০ জন অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে উৎসবটি হয়ে উঠে দারুণ প্রাণবন্ত। তরুণ-তরুণীদের সৃজনশীলতার পাশাপাশি তাদের স্বপ্ন ও শঙ্কার কথাগুলো উঠে আসে প্যানেল আলোচনায়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তরুণ-তরুণীদের বিকাশের জন্য সমতার ভিত্তিতে একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার আকাঙ্খার কথা প্রতিধ্বণিত হয় সবার কণ্ঠে।
উৎসবের উদ্বোধনী পর্বে ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ বলেন, যেকোনো সামাজিক পরিবর্তনের জন্য যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। যুব সমাজের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সমাজের সকল স্তরে পরিবর্তন আনা সম্ভব। ‘অধিকার এখানেই, এখনই’ কর্মসূচিটি তরুণদের নেতৃত্ব গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি করে এবং সমাজের এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
রিপ্রোডাকটিভ হেলথ সার্ভিসেস ট্রেনিং অ্যান্ড এডুকেশন প্রোগ্রামের (আরএইচস্টেপ) উপপরিচালক ড. এলভিনা মুস্তারি বলেন, তরুণ সমাজ শুধু ভবিষ্যৎ নয়, তারা বর্তমানের চালিকাশক্তি। তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে, সমতার ভিত্তিতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা জরুরি। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকলে এই তরুণরাই ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে।
এসইএলপি কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত তৈরির কারিগর। আজ ইয়ুথ ফ্যাস্টিভ্যালে আসা তরুণ পজন্মের উদ্যম ও উৎসাহ দেখে আমি মুগ্ধ। তারা টেকসই পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে চায় এবং আমি বিশ্বাস করি যে তরুণরা সেটি পারবে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে তরুণ-তরুণীদের তৈরি করা ভিডিওচিত্রগুলোকে পুরষ্কৃত করা হয়। এসব ভিডিওতে অপেশাদার তরুণ নির্মাতারা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন।
উৎসবের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল শাশ্বতী বিপ্লবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পাবলিক প্লেসে নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা। প্যানেলে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সরকারি ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
দিনব্যাপী আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা স্টোরিটেলিং, মানসিক সুস্থতা, ডিজিটাল অ্যাডভোকেসি এবং আত্মরক্ষার কৌশলসহ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেন; যা তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, গ্রাফিতি ওয়াল এবং তরুন উদ্যোক্তাদের পণ্যের স্টলগুলো অনুষ্ঠানস্থলকে আরো উৎসবমুখর করে তুলে।
উৎসবে ‘যত্নের দোকান’ নামের স্টলটিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিল্পীদের হাতে তৈরি কারুশিল্প প্রদর্শন করা হয়। প্রতিটি পণ্যের পেছনে দেয়া কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে মোবাইল ফোনে ভেসে উঠছে একটি ছোট ভিডিও ক্লিপ, যেখানে পাওয়া যাচ্ছে যে শিল্পী এটি তৈরি করেছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আর এভাবেই উদ্যোক্তারা গড়ে তুলছেন কারু শিল্পী ও ক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধন। ‘মনের স্কুল’ নামের উদ্যোগটি কাজ করছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে। এছাড়া ছিল ব্র্যাকের ক্যারিয়ার হাব, শেয়ার-নেট, নিউটনস আর্কাইভ, মিনডালা ডট এম এবং আর্টিস্টিক লাইফের স্টল।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্যে ছিল পপুলার থিয়েটারের নাটক এবং তরুণ শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা। উৎসবে অংশগ্রহণকারী তরুণদের জন্য যা ছিল দারুণ উপভোগ্য। যুব সমাজের অংশগ্রহণে সবার জন্য একটি নিরাপদ ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
নেদারল্যান্ডসের মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স এবং রটগার্স ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় ‘অধিকার এখানে, এখনই’ বা ‘রাইট হিয়ার রাইট নাও’ উদ্যোগটি একটি বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব, যা বাংলাদেশসহ ১০টি দেশে কাজ করছে। এই উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, অবয়ব, আরএইচস্টেপ, ঋতু এবং ইয়ুথ পলিসি ফোরাম (ওয়াইপিএফ)-কে সঙ্গে নিয়ে ব্র্যাক এটি পরিচালনা করছে। ‘অধিকার এখানে, এখনই’ কর্মসূচি এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে, যেখানে তরুণ প্রজন্ম তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এবং তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে।