প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১৯ এএম
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেই পরিস্থিতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানানো হয়নি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে। এ নিয়ে ঢাবি শিক্ষক সমিতি একটি বিবৃতি দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানকে স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আজকের এই বিজয়ের দিনেও আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ অতীব দুঃখ এবং ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সম্প্রতি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গণকবর ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং ১৬ ডিসেম্বর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের কর্মসূচি গ্রহণ করে, তখন সেসব কর্মসূচি পণ্ড করার লক্ষ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১০টার পর ছাত্র নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক ঢাবি শিক্ষক সমিতি কার্যালয়ে অন্যায়ভাবে প্রবেশ করে সেখানে সংরক্ষিত পুষ্পস্তবকের রিং তছনছ, সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনার বোর্ড নষ্ট, আসবাবপত্রের ক্ষতি এবং কার্যালয়ের কমর্চারীদের মারধরের মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনা ঘটায়। ফলে, ১৪ ডিসেম্বর ও ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রিক কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আমি গত ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় ঢাবি ক্লাবে পৌঁছে কাউকে দেখতে না পেয়ে সমিতির সভাপতিকে ফোন করি। তার কাছে জানতে পারি যে, দুর্বৃত্তের দল সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনের সামনে ইশা খাঁ রোডে অবস্থান নিয়েছে; যেন তারা বের হয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারে। আমি সকালে প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত ক্লাবে অবস্থান করে বের হয়ে যাবার সময় দেখতে পাই যে, ক্লাব প্রাঙ্গণে ও আশেপাশে বেপরোয়া কয়েকজন ছেলে অবস্থান নিচ্ছিল, যেন কোনো শিক্ষক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য আসতে না পারে। আমি মনে করি, এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকককে কর্মসূচিতে আসতে না দেওয়া নজিরবিহীন ঘটনা এবং তা সুস্পষ্টভাবে মৌলিক মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
এই ঘটনায় ঢাবি শিক্ষক সমাজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে; যা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষক সমিতি কোটার যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল এবং তা নিয়ে বিবৃতিও প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। তা সত্ত্বেও শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে এরকম হামলা বাস্তবিকই অগ্রহণযোগ্য। উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে পূর্বের ন্যায় অপারগ প্রতীয়মান হচ্ছে।
এখন আমাদের প্রশ্ন হলো, এসব দুর্বৃত্তরা আসলে কারা? এদের পরিচয় কী? এসবের পিছনে কোনো সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের মদদ আছে কি না এবং তারা একইভাবে ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী গণহত্যার সাথে জড়িত কি না? অন্যথায়, কেন তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মতো স্বীকৃত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক স্মৃতিকাতর দিবসের কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করল?
এদিকে অদ্য ১৬ ডিসেম্বর অপরাহ্ণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলয়নায়তনে ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ঢাবি শিক্ষক সমিতি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন, যা অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টালে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং তার এই বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি যে, ঢাবি শিক্ষক সমিতির অফিসে হামলার পেছনে হাসনাত আব্দুল্লাহর ইন্ধন আছে?
১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে ঢাবি শিক্ষক সমিতির গৃহীত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা প্রদান নিঃসন্দেহে বিবেকহীনতার পরিচায়ক এবং তা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার পরিপন্থী। এমতাবস্থায় আমরা দাবি করছি, এই নগ্ন হামলায় জড়িত দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য। অন্যথায় ঢাবি শিক্ষক সমাজ এরকম অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাবে এবং প্রয়োজনে জেনারেল স্ট্রাইকে নামতে বাধ্য হবে।