প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণ
আবু সালেহ মো রায়হান,পঞ্চগড়
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৮ পিএম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম
পঞ্চগড়ে শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস পরও শেষ হয়নি স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থার কাজ। এতে শৌচাগার সমস্যায় ভুগছে এসব বিদ্যালয়ের অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়াশব্লক প্রকল্পের অধীনে ২০২১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনটি ধাপে জেলায় মোট ৪৮৭টি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে তৃতীয় ধাপে ১১১টি বিদ্যালয়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের মার্চে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস পরও এসব কাজ শেষ হয়নি। এতে শৌচাগার সমস্যায় ভুগছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি সরেজমিনে জেলার বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের ভীমদামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওয়াশব্লক প্রকল্পের অধীনে বিদ্যালয়টিতে শৌচাগার নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। কিন্তু গ্রেড বিমের কাজ করে পালিয়ে যান নন্দন প্রেস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা। এরপর দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। গ্রেড বিমের ওপরে উঁচিয়ে রাখা লোহার রডেও ধরেছে মরিচা। নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে রডের গুণগত মান। অভিযোগ উঠেছেÑ বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের কাজ নন্দন প্রেস পেলেও সাব ঠিকাদারের মতো কাজ দেখাশোনা করছেন তৎকালীন বোদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী ও বর্তমানে জেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ে একই পদে কর্মরত নুনী গোপাল সিংহ। মাত্র ১০ শতাংশ কাজ করেই ৬০ শতাংশ বিল ওই কর্মকর্তার যোগসাজশে তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার।
এ ছাড়া বোদা পৌরসভার বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লকের কাজ শুরু হয় একই বছরের মার্চে। ছাদ ঢালাই করার পর কাজ বন্ধ হয়ে আছে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ হওয়ার পর আর আলোর মুখ দেখেনি। সেপটিক ট্যাংকও খোলা রাখা হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিশুরা খেলাধুলা করছে। কাজ শেষের সময়সীমার ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ করার তেমন কোনো তৎপরতা নেই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এতে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। প্রকৌশলী নুনী গোপালের সহযোগিতায মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করে ৬০ শতাংশ বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। দ্রুতই কাজ শেষ করার তাগিদ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
বোদা উপজেলার মন্নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মার্চে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় ভেঙে পড়েছে শৌচাগারের গ্রিল ও দেয়াল। বিদ্যালয় ভবনের সামনে বালি ফেলে রাখায় অসুবিধায় পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দেড় বছর ধরে থেমে আছে কাজ। বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো তাগাদা নেই কর্তৃপক্ষের। ৫০ শতাংশ কাজ করে ৭০ শতাংশের বেশি বিল তুলে নিয়েছে নন্দন প্রেস। একই অবস্থা উপজেলার জোতমনিরাম ও নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। সবগুলো কাজই করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নন্দন প্রেস।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নন্দন প্রেসের স্বত্বাধিকারী শফিউল আলম বলেন, যেটুকু কাজ করেছি, সেটুকুরই অনেক টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। তাই কাজ বন্ধ আছে। জুন পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারব। হয়তো মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কিছু চার্জ নেবেন তারা।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী নুনী গোপাল সিংহ নন্দন প্রেসের নামে কাজ নিয়ে নিজেই লোকজন দিয়ে করাচ্ছেন। অন্য ঠিকাদারদের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হলেও নন্দন প্রেসের কাজ এখনও পড়ে আছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী নুনী গোপাল সিংহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা ছাড়া কতজন ঠিকাদার সাইটে কাজ দেখতে যান। ম্যানেজাররাই তো দেখাশোনা করেন।
পঞ্চগড় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমান বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই যেসব বিদ্যালয়ে কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ হয়ে যাবে। আর আমার মনে হয়, কাজে অনিয়মের সুযোগ নেই। ঠিকাদারদের কাজের ওপর ভিত্তি করেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে। জেলায় মোট ৪৮৭টি বিদ্যালয়ে কাজ হচ্ছে। কাজ শেষ হয়েছে ৩৭৬টির।