বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:১০ পিএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫৯ পিএম
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : সংগৃহীত
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে সেকশন অফিসার (গ্রেড-১) যোগদান করেন ড. রোকনুজ্জামান। পরে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি রিসার্চ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হন। বেতন প্রাপ্ত হন সেকশন অফিসারের (৯ম গ্রেড অনুযায়ী) সম পরিমাণ। এরপর পদন্নোতি এবং উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৮বার আবেদন করেছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তার জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হলেও কোনো এক কারণে প্রতিবারই উপেক্ষিত হয়েছেন রোকনুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির রোষানলে পড়ে ১৫ বছর থেকে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ তার।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন ড. রোকনুজ্জামান। তবে সেবার তাকে পদোন্নতির বিষয়ে কোনো প্রকার নোটিশ কিংবা অবগত করা হয়নি। পরে ২০১৭ সালে তিনি কেনো তার পদোন্নতি হয়নি সেটির কারণ জানতে চেয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তিনি পুনরায় তার পদোন্নতির বিষয়ে আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর। কিন্তু এবারও বিষয়টি আমলে নেয়নি প্রশাসন।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রণীত আইনে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা ৭(১) এ বলা আছে, ‘কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে ১০ (দশ) বৎসর পূর্তিতে এবং চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে, সয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বৎসরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হইবেন।’
তবে এক্ষেত্রেও তাকে উপেক্ষা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিনি তার উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির লক্ষ্যে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবেদন করেন। এক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরবর্তীতে তিনি পুনরায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর এবং ২০২১ এর জুন ও নভেম্বরে উচ্চতর গ্রেডের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবররের মতই তাকে বঞ্চিত রাখে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এক চিঠিতে তৎকালীন উপাচার্য হাসিবুর রশীদ উল্লেখ করেন- এর আগে তিনি আবেদন না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বারবার আবেদন করার কথা উল্লেখ করলেও তিনি পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেননি।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৩ মার্চ পুনরায় পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরি বরাবর। কিন্তু এবারেও রেজিস্ট্রার কিংবা উপাচার্য কেউই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোকনুজ্জামান ছাত্র জীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি চাকরিতে যোগদানের পর রাজনৈতিক দল থেকে যুক্ত হন পেশাজীবী সংগঠনে, দায়িত্বপ্রাপ্ত হন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা দেখেছি তিনি পদোন্নতি পাননি। কি কারণে পাননি সেটা সবাই জানতো। তবে আওয়ামীপন্থীরা দাবি করতেন তিনি পদোন্নতির আবেদনই করেননি। অথচ তিনি বেশ কয়েকবার আবেদন করেন। শুধু পদোন্নতিই নয় তাকে দেওয়া হয়নি ১০ বছর পেরোলে সংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে চাকরির বেতন প্রাপ্য হওয়ার সুবিধাটুকুও।
উচ্চতর গ্রেড না পাওয়ার বিষয়ে রোকনুজ্জামান বলেন, ‘হয় রাজনৈতিক কারণে তিনি (উপাচার্য) আমাকে উপেক্ষিত করেছেন, আর না হলে আমার ব্যক্তিগত ফাইল থেকে অন্যান্য সুবিধাভোগী আওয়ামীপন্থীরা তা সরিয়ে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বারবার আবেদন করার পরেও তারা আমাকে পদোন্নতি দেয়নি, তারা সকল উপাচার্যকে ম্যানিপুলেট করত। আমাকে কোনো সুযোগ সুবিধাই দিতো না, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করেও দেওয়া হয়েছিল। আমি আমার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি বহুকাল ধরে। নতুন বাংলায় আর বৈষম্য হবে না কারো প্রতি এ আশা রাখি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী ছুটিতে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যারা কেনো পদোন্নতি পাননি তাদের ফাইলগুলো দেখতে হবে, এই বিষয়ে এখন আমি কিছু বলতে পারতেছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, ‘এ বিষয়ে তেমন কিছু এখন বলতে পারছি না। পরে ভালোভাবে বলতে পারব।’