× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাবির হলে নেই পলিটিক্যাল ব্লক, বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গণরুম’

রাজিব রায়হান, জাবি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৫০ পিএম

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৪ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গণরুম’। প্রবা ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গণরুম’। প্রবা ফটো

বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে সকল শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে সিট বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের দাপটে হলগুলোতে তৈরি করা হয়েছিল পলিটিক্যাল ব্লক। ছাত্রদের প্রতিটি হলেই ছিল দুটি করে পলিটিক্যাল ব্লক। একটিতে থাকত শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী, অন্যটিতে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। পলিটিক্যাল ব্লক থেকে ছায়া প্রশাসন হয়ে পুরো হল নিয়ন্ত্রণ করত ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মীরা। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই নিজ আবাসিক হলের সিট থেকে বঞ্চিত হত। 

কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবগুলো হল সাধারণ শিক্ষার্থীদের দখলে। আবাসিক হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির অবসান ঘটে। শিক্ষার্থীরা একে একে মুক্তি পেতে শুরু করে গণরুম ও মিনি গণরুম থেকে। হল প্রশাসনের সহযোগিতায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ সিটে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। একই সঙ্গে কমতে শুরু করেছে হলগুলোর মাদক সিন্ডিকেট, হলের দোকানে চাঁদাবাজি, নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক টর্চার সহ নানা অনিয়ম। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকল ধরনের লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করলেও আপাতত তা বন্ধ করার পক্ষে নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে ‘নিয়ন্ত্রিত’ ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষে মত প্রকাশ দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পলিটিক্যাল ব্লকের রুমগুলো দখলে রেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের অনুসারীরা চাঁদাবাজি, মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা সহ নানা অপকর্ম পরিচালনা করত। তাদের অধিকাংশই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ এবং অকৃতকার্য। তারা হলের ছায়া প্রশাসন হিসেবে কাজ করত। তাদের একেকজনের দখলে ছিল একাধিক রুম। ব্লকের রুমগুলোকে ‘অত্যাচারের স্টিমরোলার’ আখ্যা দিয়েছিল হলের সাধারণ শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। এছাড়া পোষ্য কোটায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের হলের সিট পাওয়ার নিয়ম না থাকলেও একটি বড় অংশ ছাত্রলীগের দাপটে দখলে রেখেছিল বিভিন্ন হলের একাধিক রুম। ফলে কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হত গণরুমে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সুগঠিত হতে শুরু করেছে। তারা ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্রদলের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তাদের দেখা গিয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আসলে ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব যদি না থাকত, তাহলে অনেক আগেই গণরুম বা মিনি গণরুম থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুক্তি পেত। তাদের অধিকাংশ ছিল অছাত্র এবং হলে অবৈধভাবে সিট দখলকারী। এখন তাদের দখলকৃত সিট ফাঁকা হওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই সিটগুলোতে উঠছে। তবে এখানেও প্রশাসনিক তদারকিটা হচ্ছে না। যার ফলে ছাত্রলীগ না থাকলেও কয়েক বছর পর অছাত্রদের দখলদারিত্বে আবার সিট সংকট ফিরে আসতে পারে। এজন্য প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

গণরুমে থাকার অভিজ্ঞতা জানিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাকিব আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪০-৫০ জন একসাথে ডাইনিং এ গণরুম করেছিলাম। খাবারের সময় হলের সকল শিক্ষার্থীরা ডাইনিং এ খাওয়া-দাওয়া করত, আর আমরা নিজেদের বিছানা গুটিয়ে নিয়ে সকলেই একসঙ্গে গাদাগাদি করে অবস্থান করতাম। সেখানে না ছিল পড়াশোনার পরিবেশ, না ছিল সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ। এমন একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিনিয়তই সাধারণ শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ত। তারপরও বাধ্য হয়ে উপায় না থাকায় সেখানেই থাকতে হত শিক্ষার্থীদের। এছাড়া মাঝে মধ্যেই রাতে পলিটিক্যাল ব্লকের নেতাকর্মীদের অপসংস্কৃতির চর্চা গণরুমের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করত। কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পর হলগুলোতে পলিটিক্যাল ব্লকের নেতাকর্মীদের অবৈধ রুম দখল শেষ হয়েছে। একটি বড় অংশের মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হয়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একে একে মুক্তি পাচ্ছে এই নোংরা গণরুম সংস্কৃতি থেকে।’

প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক বলেন, ‘মেয়েদের হলের তুলনায় ছেলেদের হলগুলোতে সিট সংকট বেশি ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণরুম এবং মিনি গণরুম করে থাকত। সরকার পতনের পর হলগুলো থেকে পলিটিক্যাল ব্লকের সমাপ্তি ঘটেছে। সেই সঙ্গে ফাঁকা হয়েছে অবৈধভাবে দখল করা সিটসমূহ। এই সিটগুলোতে হল প্রশাসনের সহযোগিতায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু বণ্টন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে নিজ নিজ সিটে থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ধরনের র‍্যাগিং, গণরুম বা কোনও ধরনের পলিটিক্যাল ব্লক থাকবে না। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যাতে এসেই নিজ সিটে উঠতে পারে আমরা সেই ভাবেই কাজ করছি ‘

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা