সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫৬ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৪ পিএম
খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চরম অনিশ্চয়তার
মধ্যে পড়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের
অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। যে
কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক,
একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রম
সঠিকভাবে চালু করতে সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ,
দক্ষ চিকিৎসক তৈরি,
স্বাস্থ্য খাতে সর্বাধুনিক
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণায়
স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ২০২১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি
স্থাপিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে
প্রশাসনিক, আর্থিক
ও ক্রয় ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক কার্যক্রম অটোমেশনের আধুনিক প্রযুক্তির পদ্ধতিতে
উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস
ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। জমি অধিগ্রহণ,
পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসসহ
অবকাঠামো নির্মাণ এবং জনবল নিয়োগ ও আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ
বরাদ্দ না হওয়ায় অনিশ্চয়তার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। খুলনার নাগরিক আন্দোলনের নেতারা ও
সাধারণ মানুষ সকল ষড়যন্ত্র ও জটিলতা অপসারণ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রকিবুল ইসলাম জানান,
২০২১ সালে উপাচার্য নিয়োগের পর
বিধি অনুযায়ী ২০ সদস্যবিশিষ্ট সিন্ডিকেট গঠন করা হয়। গত
সাড়ে তিন বছরে প্রতি ৩ মাসের ব্যবধানে মোট সিন্ডিকেটের ১০টি সভার মাধ্যমে
নিয়োগ, ক্রয়সহ সকল সিদ্ধান্ত
অনুমোদন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
প্রতিষ্ঠায় পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরসহ সকল দপ্তরের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনা
হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) মোট ৪৬ জন জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের
নিয়োগবিধি ও সরকারের নির্দেশিত নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে
স্বচ্ছতার ভিত্তিতে মোট ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডা. নাসরিন আক্তার জানান,
খুলনা মেডিকেল কলেজ,
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ,
যশোর মেডিকেল কলেজ,
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ,
মাগুরা মেডিকেল কলেজসহ পাঁচটি
সরকারি এবং খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ, আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ ও আদ-দ্বীন সাকিনা ওমেনস
মেডিকেল কলেজসহ চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অধিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া
খুলনা সরকারি নার্সিং কলেজ এবং খুলনার মমতা নার্সিং কলেজ, এশিয়ান নার্সিং কলেজ ও নার্সিং
অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজ, বাগেরহাটের নার্গিস মেমোরিয়াল নার্সিং কলেজ,
মাগুরার ওয়ার্ল্ড নার্সিং কলেজ
ও যশোরের নার্সিং অ্যান্ড
মিডওয়াইফারি কলেজসহ ছয়টি বেসরকারি নার্সিং কলেজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব
মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজগুলোর জন্য সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ পরীক্ষার ফিস নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বিশেষায়িত স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার
সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা
সহজলভ্যকরণ এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট গবেষণাকে উৎসাহিত করাÑ এ তিনটি উদ্দেশ্যে
সামনে নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পের
অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে অতি শিগগিরই জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে এবং অবকাঠামো
নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস সৃষ্টির জন্য
কাজ করে যাচ্ছি। স্থায়ী ক্যাম্পাস হলে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিন ধাপে
১৮শ বেডের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য
স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি খুবই সহজলভ্য হবে। যা ঢাকা কিংবা পার্শ্ববর্তী
দেশে যে কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য যায় সেটি রোধ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়
করা সম্ভব হবে।
খুলনা সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার জানান,
খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপন এ অঞ্চলের জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে এক নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। শুধু
চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয়Ñ একটি মাল্টি ডাইমেনশনাল ফ্যাসিলিটি সৃষ্টি হয়েছে। এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
এ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে লবণাক্ততাসহ জলবায়ু ও
পরিবেশগত কারণে ভিন্ন মাত্রার রোগের আবির্ভাবের বিষয়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকৃত
সমাধানের পথ তৈরি করবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটি অপসংস্কৃতির চর্চার প্রবণতা রয়েছে,
সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে
বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করা। শেখ
হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও আমরা এ ধরনের প্রবণতা দুঃখজনকভাবে লক্ষ
করছি।
খুলনা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান এবং বর্তমান অর্ন্তবর্তী
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্রুত অর্থ ছাড় করে
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবিও জানান
তিনি।