প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৩২ পিএম
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠান। প্রবা ফটো
এখনকার তরুণ প্রজন্ম ছাত্র রাজনীতির নামে চরম অপরাজনীতির সঙ্গে পরিচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তবর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সমস্যা হলো এখনকার তরুণ প্রজন্ম ছাত্র রাজনীতির নামে চরম অপরাজনীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং দখলদারির রাজনীতির সাথেই শুধু পরিচিত। ছাত্রজীবনে আমিও রাজনীতি করেছি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনে ষাটের দশকের শেষের দিকে বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের একটি নবজাগরণ হয়েছিল। অর্থনৈতিক, রাজেনৈতিক যত অব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র আন্দোলনের মুখেই অন্যায্য ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ করতে আমেরিকা বাধ্য হয়। আমরাও ঢাকা বসে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধ হোক সে দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বায়ান্ন, উনসত্তর, নব্বইয়ের ছাত্র আন্দোলনের গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের বড় অংশগ্রহণ ছিল। সর্বশেষ আমরা এখন ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান দেখলাম। ফলে অন্তর্বতী সরকার গঠিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং সেই সাথে মুক্ত চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার স্বাধীনতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় শিক্ষার্থীরা ভোটার হিসেবে অবশ্যই রাজনীতির অংশ কিন্তু যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি আচরণবিধি নির্ধারিত থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আমি আশা করবো নিজেদের প্রজ্ঞা দিয়ে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের নিজস্ব আচরণবিধি তৈরি করতে পারবে।’
পাঠ্যবই সংস্কারে তাড়াহুড়ায় কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে বলে জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ভবিষ্যতে তা সংশোধন করা হবে।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের জাতীয় শিক্ষানীতি থাকা উচিত। কিন্তু আমরা শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে বিপাকে পড়েছি। সামনের বছরের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন অল্প সময়ে করতে হয়েছে। এজন্য হয়ত কিছু ভুল থাকতে পারে, ভবিষ্যতে তা সংশোধন করা হবে।
শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষা কমিশন অনেক কঠিন কাজ। যারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসবে তারাই পূর্ণাঙ্গ কমিশন করবে। আমরা কিছু সংস্কার করবো।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন অনেক কম। এটা শিক্ষকতায় মনোযোগের অন্তরায়। প্রতিটি পর্যায়ে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। বেসকরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দূর-দূরান্তে গিয়ে চাকরি করছেন। এটা পুরোপুরি সমাধান না হলেও আংশিক সমাধানে কাজ করা হবে। অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন। শিক্ষকরা বঞ্চিত এটা ঠিক, তেমনি অন্যান্য পেশার মতো তাদেরও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নত মানব সম্পদ ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। আমাদের অপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির নামে শুধু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান উন্নয়ন করা হয়নি। এত বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি, কিন্তু কর্মসংস্থানের যোগসূত্র তৈরি করিনি। এজন্যই শিক্ষিত বেকার তৈরি হয়েছে। শিক্ষার বৈষম্যই অর্থনৈতিক বৈষম্যর প্রধান কারণ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, একজন শিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলো ছাত্র। আমি আপনাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সব কথা শুনেছি। এ বিষয়গুলো গ্রহণ করেছি, কি করতে পারি আমরা দেখব। এক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছে রয়েছে কিন্তু সামর্থ্যের অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যের বিষয়গুলো চাকরি জীবনে আমি অনেক পেয়েছে। ফলে আমি বৈষম্যগুলো বুঝতে পারি এবং উপলব্ধি করতে পারি এবং সে বৈষম্যগুলো দূর করা দরকার। আমি সে প্রসঙ্গে একমত।
তিনি আরও বলেন, মানুষকে মানুষ হয়ে গড়বার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান প্রাথমিক শিক্ষকের। মানুষ যখন মায়ের গর্ভ থেকে প্রথমবার জন্মায় তখন অন্যান্য প্রাণীর মতোই সে থাকে। পরবর্তীতে সময়ে যখন তার সংস্কৃতি ও শিক্ষাকে গ্রহণ করে মানুষ হয়ে উঠে তখন তার দ্বিতীয় জন্ম হয়। আর মানুষের এই দ্বিতীয় জন্মের পেছনে সবচেয়ে বড় যে অবদান রাখেন সে হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষক। এখানেই একজন শিক্ষকের সার্থকতা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো ঢাকার হেড অফিসের ডা. সুশান ভাইজ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ।
এসময় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি আইবিএস প্লাস প্লাস এর মাধ্যমে ইএফটিতে প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পাশাপাশি গুণী শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।