বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩১ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৪ পিএম
সাংবাদিকদের সংঙ্গে আলাপকালে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ। প্রবা ফাটো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমের আত্মপ্রকাশের পর এবার গণমাধ্যমের সামনে এসে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি জেনারেল এস এম ফরহাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ছাত্রশিবির এবং সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ বলেন, পরিচয় জনগণের সামনে প্রকাশ পাবার পর আমরা যে হলে ছিলাম, ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যাদের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিলো সবদিক থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক পাচ্ছি। এর বাইরেও সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত বা আরও কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আপনারা জানতে চাইছেন সেগুলো আমি ক্লিয়ার করবো এই সংবাদ সম্মেলনে।
ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, আমার ইনস্টিটিউট কেন্দ্রিক যে ইস্যুটি এসেছে সেখানে সাধারণত ছাত্রলীগের কমিটিতে যাওয়ার যে স্টাইল সেগুলো কোনোটিতেই আমি জড়িত না। নিয়মিত প্রোগ্রাম করা, নেতাদের প্রটোকল দেওয়া, মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে হাজিরা দেওয়া এবং পদের জন্য সিভি দেওয়া এগুলো কোনোটিই আমি করিনি। এরপরও কেন নাম এসেছে এই প্রশ্নগুলো একান্তই ছাত্রলীগের ব্যাপার। ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে বা মন্ত্রীদের সাথে আরও অনেক ছবি আপনারা দেখতে পাবেন সেগুলো ডিবেটিং ক্লাবের সাথে সম্পর্কিত। আমি ছাত্রলীগের কোন প্রোগ্রামে কখনো ছিলাম না। ছাত্রলীগের সঙ্গে ছবি আরও অনেক আসবে কারণ আমি ডিবেটিং ক্লাবের সদস্য। এছাড়া সাবেক মন্ত্রীর কাছ থেকে আমি ডিবেটিং ক্লাবের পুরষ্কারও নিয়েছি।
আন্দোলনে ৯ দফার বিষয়ে শিবিরের যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনটি ছিলো যেমন ছাত্রদের, তেমনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সকল দলের নেতাকর্মীরা তাদের দল ও মতের পরিচয় ভুলে গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী সামিল হয়েছে। ছাত্র শিবিরও তার যেটুকু রিসোর্স (জনবল) ছিলো, সক্ষমতা ছিলো তার সবটুকু দিয়ে যুক্ত ছিলো। কোনটা কে করেছে ইত্যাদি ক্রেডিট নেওয়াটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। এখানে দল মতের পরিচয় ভুলে গিয়ে সবাই একসাথে আন্দোলন করেছে, আমরা এই স্পিরিটের সঙ্গেই থাকতে চাই।
দীর্ঘদিন গোপনে রাজনীতি করার বিষয়ে ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি বলেন, ছাত্রশিবির আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও ২০১৪ পর্যন্ত মোটামুটি প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশব্যাপী অনবরত গুম, ক্রসফায়ার আর রিমান্ডে নিহত এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। দেশের কোনো দল বা সংগঠনও এসবের খুব একটা প্রতিবাদ করেনি। আপনারা কি বলবেন তোমার বড় ভাইকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে, তুমি কেন পরিচয় দিচ্ছো না! এই প্রশ্নটা কি ভ্যালিড নাকি তোমার বড় ভাইকে কেন হত্যা করা হয়েছে তার বিচার চাই এই প্রশ্নটা ভ্যালিড! গুম হত্যার ভয়ে যখন কেউ গোপন রাখে তখন সেটি নিয়ে প্রশ্ন করাটা মনে হয় মজলুমের প্রতি আরও বেশি জুলুম করা হবে।
আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে ছাত্র শিবিরকে বাধা হিসেবে দেখেছিল বলে মনে করেন ঢাবি শাখা শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ। আর এজন্যই রগকাটা ট্যাগ দেয়াসহ নানাভাবে শিবিরের উপর দমনপীড়ন চালানো হয় বলে জানান তিনি।
রগকাটা বিষয়টি শিবিরের সঙ্গে এত জড়িত কেন- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ বলেন, ‘সহজ করে বললে রগকাটা লিখে গুগলে সার্চ করলে দেখবেন সব ক্রাইমে ছাত্রলীগের নাম। শিবিরের নামে কোনো ডকুমেন্ট পাবেন না। ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে শিবিরের নামে নানা ধরনের ট্যাগ দেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদ কায়েম করার জন্য অনেক উপাদান কাজ করেছে। অনেকে হয়ত সেগুলো সমর্থন দেননি, কিন্তু কেউ বিরোধিতা করতে পারেননি। এর ফলে যখন একটা ন্যারেটিভ দাঁড় করানো হয়, তখন সেটা প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। কিন্তু ন্যারেটিভটা ভুল নাকি সঠিক, সেটার সিদ্ধান্ত দেবেন আপনারা। আপনারা যাচাই করে দেখবেন সেটা সত্য কি-না।
শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে ঢাবি শিবির সেক্রেটারি বলেন, ‘ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের ক্ষেত্রে কমিটিতে কে থাকবে, সেটা তাদের একটা অরগানাইজেশন ঠিক করে দেয়। কিন্তু শিবিরের কমিটি ঘোষণা বা বিলুপ্ত শিবিরের নিজের। শিবিরের অধীনস্ত জনশক্তি সিদ্ধান্ত নেয় সভাপতি কে হবে। সেটা বিবেচনা করে ব্যক্তিত্ব ও সক্ষমতা বিবেচনায়। তারাই বলে ওমুককে আমরা সভাপতি হিসেবে চাই। শিবির একটা স্বাধীন সংগঠন। নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং ফ্রেমওয়ার্ক আছে। সেটা ওপেন। অনলাইনে সার্চ করলেই পাবেন। সেই অনুযায়ীই কাজ করা হয়।’
পরিবেশ পরিষদ ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার ৩ টি প্রতিষ্ঠানের আছে। সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল ছাড়া অন্য কারো সিদ্ধান্ত এখানে গ্রহণযোগ্য না। এই ৩ প্রতিষ্ঠান শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে কখনো আলাপ পর্যন্ত করেনি।
শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতি অপছন্দের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান চিন্তাভাবনা ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরের অপকর্মের ফলাফল। শিক্ষার্থীরা ১৫ বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি যেমন দেখে আসছে ছাত্ররাজনীতি বলতে তাই ধরে নিচ্ছে। আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে না। প্রশাসনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত নিবে। ছাত্ররাজনীতিকে যদি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে তারা খুব সহজেই গ্রহণ করে নিবে বলে বিশ্বাস এস এম ফরহাদের।