রাবি শিক্ষকের কেলেঙ্কারি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৭ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৯ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক তিনি। মাঝরাতে এক ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে মেসেজ দেন, ‘তোমার ফোনে ভিডিও কল দিলে ধরো না কেন? একবারে ফেল করাই দিমু।’ আরেক ছাত্রীকে
অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘সুন্দর না? অনেক দিন পর
দেখলাম।’
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী
কেলেঙ্কারি, যৌন হেনস্থা,
রেজাল্ট সিন্ডিকেট, শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর ভয় দেখানোসহ
মানসিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক রাবির
গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও
শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন আহমেদ। তার বিরুদ্ধে
অভিযোগ, তিনি গভীর রাতে ছাত্রীদের ভিডিও কল ও মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করার পাশাপাশি অশালীন
ভিডিও পাঠান। এমন কিছু প্রমাণ সম্প্রতি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিও জানিয়েছেন
বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা
উল্লেখ করেছেন, কারুশিল্প
ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রতি ব্যাচের সব ব্যবহারিক ক্লাস ও মার্কিংয়ের
দায়িত্ব তিনি একাই পালন করেন। ফলে এ বিভাগে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে শিক্ষার্থীদের
ফেল করানোর হুমকি দেন। ক্লাসে সবার সামনে একাধিক ছাত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার পাশাপাশি
অপ্রয়োজনে রাত-বিরাতে ভিডিও কল ও যৌন ঈঙ্গিতমূলক ভাষায় মেসেজ দেন। এ ছাড়া শারীরিক
গঠন নিয়ে বিভিন্ন অশালীন ও আপত্তিকর মন্তব্য করাসহ ছাত্রীদের তার কোলে বসার
প্রস্তাবও দেন। এ ছাড়া বিবাহিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের আলাপও করেন। ভুক্তভোগী
নারী শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো মেসেজ ও ভিডিও কল দেওয়ার ডকুমেন্টস থেকে বেরিয়ে
আসে ড. মনিরের আসল চেহারা।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ
করেন, অ্যাটেনডেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছাত্রীদের ডেস্কের ভেতর তার গা ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে সই দিতে বাধ্য করতেন। ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যসহ পেশাগত
ক্ষমতা ব্যবহার করে একাধিক শিক্ষার্থীকে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবও জানান।
গণমাধ্যমের হাতে আসা বিভিন্ন
স্ক্রিনশটে দেখা যায়, ড. মনির গত ২০ জানুয়ারি এক
ছাত্রীকে মেসেঞ্জারে অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘এক্সট্রা ক্লাস চলিতাছে, বালা না?’ ২০২০ সালের ৯ জুলাইয়ে আরেক ছাত্রীকে লেখেন, ‘রাত কিন্তু ৩টা ৫৪ বাজে, আমি করি চৌকিদার, আপনি কই?’ আরেক ছাত্রীকে লিখেছেন, ‘ঘুম
নেই, একদম ফেইল করাই দিমু।’
আরেক ছাত্রীকে অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছেন, ‘সুন্দর না? অনেক দিন পর দেখলাম।’ মেয়েটি কোনো সাড়া না দিলে তিনি আবার লিখেছেন, ‘কিছুই কি বলবা না?’ এভাবে প্রকাশের অযোগ্য
ভাষা ব্যবহার করে ছাত্রীদের তিনি বিভিন্ন মেসেজ, ছবি ও ভিডিও পাঠাতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন তার টার্গেটে পড়ি। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে
ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। আমার ইনার গার্মেন্টস নিয়ে কথা বলতেন।
জ্বর দেখার নাম করে হাতে, কপালে,
মুখে, গলায় হাত দিতেন। ঊরু দেখিয়ে ইশারায় সেখানে বসতে
বলতেন। এক দিন পেনসিল খুঁজতেছি বলায় বাজে কথা বলেন। কারও সঙ্গে আমার শারীরিক
সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইতেন। আমি এই বাজে মানুষটার কঠিন শাস্তি চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. মনির
উদ্দিনকে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন,
কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের
সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অনেক বিষয়ে
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয় এবং তার বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করে। বিভাগের শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য সেদিনই জরুরি একাডেমিক কমিটির মিটিং হয়। সেখানে সবার পরামর্শে
তাকে সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম কনক বলেন, বিষয়টি এখনও বিভাগই দেখছে। যদি তারা ব্যর্থ হয়
সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখবে। একসঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের সমস্যা উঠে আসায়
আমাদেরও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। উপাচার্য এ বিষয়ে অবগত আছেন।
তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে কোন আচরণ করা যাবে আর
কোনটা করা যাবে না সেই নৈতিকতাটা থাকাটা জরুরি। আচরণের মধ্যে এমন কিছু যদি থাকে যা
অন্যকে নিপীড়ন করে, সেগুলো শিক্ষক হিসেবে দেখা দরকার। এ বিষয়ে শিক্ষকদের কাউন্সেলিং
প্রয়োজন।