রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
শাকিবুল হাসান, রাবি
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:১৫ পিএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৪ পিএম
প্রায় অর্ধ যুগ ধরে অকার্যকর হয়ে আছে রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট। একইভাবে ৩৪ বছর ধরে অকার্যকর ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। বছরে অন্তত একবার সিনেট অধিবেশন
হওয়ার কথা থাকলেও রাবিতে গত সাত বছরে একবারও হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত,
একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না।
সিনেট প্যানেল নির্বাচন ছাড়া উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ায় এ বডি দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ২১ নম্বর
ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা ডাকবেন। উপাচার্য চাইলে এর বাইরেও
বিশেষ সভা আহ্বান করতে পারেন। ধারা অনুযায়ী, সিনেটের সদস্য হবেন ১০৫ জন। উপাচার্য পদাধিকার
বলে সভাপতি, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ সদস্য এবং রেজিস্ট্রার হন সচিব। সিনেটের আচার্য,
সরকার, স্পিকার মনোনীতসহ অধিকাংশ সদস্য পদই মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যদ্বয়
সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর
বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালের ১৮ মে সিনেট অধিবেশন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ
মিজানউদ্দিন। পরের বছর ২০১৭ সালে ২২তম অধিবেশনও হয় তার সভাপতিত্বে। এরপর আর কোনো সভা
আহ্বান করেননি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। সদ্যসাবেক উপাচার্য অধ্যাপক
গোলাম সাব্বির সাত্তারের তিন বছর পূর্ণ হলেও একটি সিনেট সভাও করতে পারেননি।
এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক
অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, সিনেট বা রাকসুর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের
বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে প্রশাসনকে চাপ দেওয়া। এ ছাড়া প্রত্যেকটা হলে একটা করে কমিটি
থাকে। এই যে এখন যেমন হলে চাঁদাবাজিÑ এটা আর থাকত না। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের
ক্ষমতাকালীন দলীয় অঙ্গসংগঠন দিয়ে হল দখলে রাখার কারণে রাকসু-সিনেট কার্যকর সম্ভব হয়নি।
অচল রাকসু সচল ফি
রাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) গত প্রায়
৩৪ বছর ধরে অচল। রাকসু অচল থাকলেও সচল রয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়। ১৯৮৯-৯০
সালে সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়। এমনকি রাকসু ভবনে এর জন্য কক্ষ বরাদ্দ নেই। বর্তমানে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি)
দুটি ছোট্ট কক্ষে নামমাত্র চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা
ও সাবেক রাকসু নেতারা জানান, ছাত্র সংসদ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য
অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। এদিকে দীর্ঘ সময় রাকসু নির্বাচন না হলেও থেমে নেই এর
চাঁদা আদায়। এজন্য প্রতি বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তির সময় গুনতে হয় ১৫ টাকা করে।
রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক
ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব মেহেদী বলেন, আমাদের নয়টি দাবির মধ্যে ক্যাম্পাসে
দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টিও রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের
দলীয় রাজনীতি বন্ধ করে রাকসু সচলে কাজ করব। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতামত দিয়ে যাকে নেতৃত্বে
নিয়ে আসবে সে-ই রাকসুর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসি প্রফেসর
ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমরা চাই সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে
আনা। আমার প্রায়োরিটির বিষয়গুলোর মধ্যে রাকুস অনেক ওপরের দিকে। দীর্ঘদিন ধরে এটা কাজ
করছে না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে রাকসুর বিষয়টি সুরাহা করতে চাই।
ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ প্রসঙ্গে ভিসি
বলেন, কাগজে-কলমে একটা নির্বাহী আদেশের বলে আমি এটা করতে চাই না। আমি মনে করি না এটা
ঠিক উপায়। এমনটি করলে তা টেকসই কতটুকু হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে স্টেকহোল্ডারদের
সঙ্গে সবাই বসে একটি নীতিমালা করা, যা টেকসই হয়। তবে যে ধারায় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি
হয়ে আসছে, এগুলোর কোনো জায়গা থাকা উচিত নয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।