রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:২৬ পিএম
রাবি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলে ছাত্রলীগের পদধারী নেত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার। নোটিশ জারির পর ছাত্রলীগ নেত্রীদের কক্ষে গিয়ে তাদেরকে বের হতে নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশ দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন ওই প্রাধ্যক্ষ। হল প্রাধ্যক্ষের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন হলের আবাসিক ছাত্রলীগ নেত্রীরা। পরবর্তীতে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সমালোচনার মুখে পড়ে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে প্রাধ্যক্ষ বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি দেন।
১৪ সেপ্টেম্বর ওই হলে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রী নিপীড়ক ও ছাত্রলীগের পোস্টেড (পদধারী) নেত্রীবৃন্দকে আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, এ ধরনের কোনো আদেশ তারা দেননি। আবাসিক হলগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে অবস্থানরত শুধু অনাবাসিক ও একাডেমিক কার্যক্রম শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা হলে, হল প্রশাসন বিজ্ঞপ্তিটি প্রত্যাহার করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দেয়। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘অত্র হলের নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তাদের আগামী ১৯.০৯.২০২৪ তারিখ রাত ৮টার আগে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হল। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের একজন বৈধ আবাসিক ছাত্রলীগের নেত্রী বলেন, ‘আমরা হলের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী। আমাদের বিরুদ্ধে তো কোনো লিখিত অভিযোগ নেই। তাহলে আমাদেরকে কেন হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হবে? আমাদের অনেকেরই সামনে পরীক্ষা। কারও কারও পরীক্ষা চলমান। এই অবস্থায় হল প্রাধ্যক্ষ কক্ষে এসে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। অন্যথায় আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে নামিয়ে দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলেও আমাদের প্রাধ্যক্ষ নিজের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নামে চালিয়ে দিয়েছেন।‘
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি এ রকম কোনো নির্দেশ পায়নি যে হলের পদধারী ছাত্রলীগের নেত্রীদের হল থেকে বের করে দিতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের কোনো নোটিশ দেয়নি। আর একজন ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল বা ছাত্র শিবিরের পদে থাকলেই যে সে নিপীড়ক হবেন, বিষয়টি এমনও নয়।’
হল প্রাধ্যক্ষ একজন আবাসিক শিক্ষার্থীকে এভাবে নোটিশ দিয়ে হল থেকে বের করে দিতে পারেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আমরা কোনো শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক মতাদর্শের বিচার করতে পারি না। সকল শিক্ষার্থীই আমাদের কাছে শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে কোনো শিক্ষার্থী যদি শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে হল প্রশাসন তার আবাসিকতা বাতিল করতে পারে। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলে আমরা কোনোভাবেই তাকে হল থেকে নামিয়ে দিতে পারি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার বলেন, ‘অনেক ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন যারা শিক্ষার্থী নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত, আমরা তাদেরকে নেমে যেতে বলেছি। সকল ছাত্রলীগ নেত্রীদেরকে নয়। অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আছে। আমরা তাদেরকে সাময়িকভাবে নেমে যেতে বলেছি। অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে আমরা সমাধানমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হবে, তারা তাদের আসন ফিরে পাবেন।’
হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আদেশক্রমে নোটিশ জারি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হল প্রশাসনেরই সিদ্ধান্ত। তবে ভুল করে বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লেখা হয়েছে। তবে আমি একটা সংশোধিত নোটিশ দিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি প্রাধ্যক্ষ পরিষদের যে যে মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম সেই মিটিংগুলোতে এধরনের (ছাত্রলীগের পদধারীদের হল ত্যাগ) কোনো আলাপ হয়নি।’