বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৩০ পিএম
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৪ ২০:১১ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হল ক্যান্টিনে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকার খাবার বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর থেকে ৫ বছরে ছাত্রলীগের নেতারা এই পরিমাণ বাকি খেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ক্যান্টিন মালিক।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতাদের বাকির একটি তালিকা প্রকাশিত হয়। তালিকায় ৪৮ জনের বাকির হিসাব পাওয়া যায়। তালিকায় নাম আসা ব্যক্তিদের সিংহভাগই হল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদপ্রাপ্ত নেতা। ছাত্রলীগ নেতারা ১৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্যান্টিনের মালিক বাবুল মিয়া।
তালিকা অনুযায়ী, ১৭ লাখ টাকার মধ্যে হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকই খেয়েছেন সাড়ে ৫ লাখ টাকার বেশি। তার মধ্যে সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বাকি খেয়েছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং মুনেম শাহরিয়ার মুন ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বাকির তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান রিফাত ১ লাখ ১৫ হাজার, হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল ১ লাখ ১৫ হাজার, হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ১ লাখ ১৫ হাজার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহিম সরকার ৫৫ হাজার, হল সংসদের সাবেক ভিপি আবদুল আলীম ৬০ হাজার, হল ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক কামরুল শুভ ১৭ হাজার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আবছার হোসেন রানা ৪৫ হাজার, বাইজিদ ৪৫ হাজার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজু ১২ হাজার, ছাত্রলীগ নেতা হারুন ৭০ হাজার ও উচ্ছল ৮৫ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন। এ ছাড়াও বাকির তালিকায় নাম আসা ব্যক্তিদের সর্বনিম্ন বাকির পরিমাণ আড়াই হাজার টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাদের এমন ‘ফাও’ খাওয়ার কারণে ক্যান্টিন মালিক খাবারের দাম বাড়িয়েছেন এবং মান নষ্ট হয়েছে। এর ফল ভোগ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মনেম শাহরিয়ার মুনসহ একাধিক নেতাকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কেউ সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্যান্টিন কর্মী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা ইচ্ছে মতো খেয়ে চলে যেত। টাকা-পয়সা তাদের কাছে চাওয়া যেত না। চাইলেও অনেকে ধমক দিত। সাধারণ সম্পাদক মুনের জন্য নিয়মিত স্পেশালি রান্না করা হতো। জানি না এই টাকা আর পাওয়া যাবে কি না।’
এ বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক বাবুল মিয়া বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ক্যান্টিন থেকে ১৭ লাখ টাকার বেশি বাকি খেয়েছে। আমাকে একদম পথে বসিয়ে দিয়েছে তারা। আমরা গরিব মানুষ, ১ লাখ টাকাও তো অনেক বেশি। যেভাবে হোক আমার এই টাকা ফেরত চাই।’
ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য ক্যান্টিনে আলাদা রান্না করতে হতো জানিয়ে বাবুল মিয়া বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাদের ১৫/২০ জনের জন্য প্রতিদিন আলাদা রান্না হতো। এ ছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য প্রতিদিন ৮/১০টি খাবার পাঠানো লাগত।’