কোটা সংস্কার আন্দোলন
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ২৩:২২ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৪ ০০:৫১ এএম
ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেশের বিভিন্ন জেলার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার (৩ আগস্ট) এবং শুক্রবার (২ আগস্ট) তাদের বিশেষ বিবেচনায় জামিন দেওয়া হয়। আবার কারও কারও জামিনে মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানার মামলায় গ্রেপ্তার ৪২ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে গতকাল শুক্রবার জামিন দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৩৭ জন ও ঢাকা জেলার পাঁচজন রয়েছেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪১ জন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪১ জনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার নাশির আহমেদ বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান ৩৫ জন শিক্ষার্থী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে আরও ৬ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৪১ জন শিক্ষার্থীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগারের সামনে তাদের স্বজনরা অপেক্ষায় ছিলেন। নিজ নিজ স্বজনরা তাদের বুঝে নিয়েছেন।
কাশিমপুর কারাগার থেকে সাতজন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাতজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কাশিমপুর কারাগারের কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে গ্রেপ্তার হওয়া শনিবার দুপুরে তিনজন এবং সন্ধ্যার দিকে চার জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্তরা হলো, মিনহাজুল ইসলাম আব্দুল্লাহ, মির্জা সাদিকুর রহমান এবং রাতুল ভুইয়া, মো. হেলাল, লিমন মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, সামিউল্লাহ সাকিব।
রংপুরে জেলা কারাগার থেকে ১১ জন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আরও ১১ জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। রংপুর জেলা লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবি শামীম আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে লিগ্যাল এইডের সহযোগিতায় তাজহাট থানা আমলী আদালতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এফএম আহসানুল হকের আদালতে ১১ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা ও শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের জামিন দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় আট জন এবং শনিবার বিকালে পাঁচজনের জামিন দেওয়া হয়।
রাজশাহী থেকে পাঁচজন
রাজশাহীতে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন পাঁচজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। শনিবার দুপুরে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় হওয়া মামলায় ওই শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
জামিনে মুক্তিপ্রাপ্তরা হলো, আহনাফ আকিব অরণ্য, মো. রাব্বি ও রাকিবুর রহমান। ইমরান ফরহাদ ও সৌরভ আলী।
মাগুরা থেকে দুইজন
মাগুরায় কারাগারে থাকা দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গত ১৮ ও ২৪ জুলাই মাগুরা সদর ও শ্রীপুর থানার দুটি মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। শনিবার সকালে মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সব্যসাচী রায় তাদেরকে জামিন দেন। দুপুরে তারা মাগুরা জেলা কারাগার থেকে তারা মুক্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
জামিনে মুক্তি পাওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী হলো, মো. নিহাজ উদ্দিন ও মো. জিহাদ শেখ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চারজন
নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার চারজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে তারা কারামুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
কারামুক্ত পরীক্ষার্থীরা হলো- নাশকতা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার রাজধানীর ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইজতেজার সৃজন চৌধুরী ও মাহতাব জামাল মাহিন। অপর দুই পরীক্ষার্থীর নাম আবদুল কাইয়ুম ও বাঁধন; তারা কোন কলেজের শিক্ষার্থী, তা জানা যায়নি।
দিনাজপুর থেকে পাঁচজন
দিনাজপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। শনিবার বিকালে দিনাজপুর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. মনিরুল ইসলাম তাদের জামিন দেন। দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম লিয়াকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জামিন পাওয়া ওই শিক্ষার্থীরা হলো- নবাবগঞ্জ উপজেলার মোগরপাড়া গ্রামের সামিউল ইসলাম, চিরিরবন্দর উপজেলার কলেজপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান, একই উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মো. মোসাদ্দেক হোসেন, সদর উপজেলার পাহাড়পুর এলাকার আবু রায়হান এবং ঘোড়াঘাট উপজেলার নয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার আবদুল আলীম।
সৈয়দপুর থেকে একজন
নীলফামারীর সৈয়দপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের করা মামলায় মিনহাজ পায়েল নামে গ্রেপ্তার এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। শনিবার দুপুরে শুনানি শেষে সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সহদেব চন্দ্র রায় পরীক্ষার্থী বিবেচনায় ৫০০ টাকা বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
মিনহাজ উপজেলার নিয়ামতপুর বানিয়াপাড়া গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে। তিনি সৈয়দপুর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
মাদারীপুর থেকে তিনজন
মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তার তিনজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন দিয়েছেন আদালত। শনিবার জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ উল হাসান চৌধুরী তাদের জামিন দেন। কারামুক্ত হওয়া পরীক্ষার্থীরা হলেন, তানভীর কাজী, মানজারুল ইসলাম রাব্বি ও নূর আলম সরদার।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন কেরানীগঞ্জ, কালিয়াকৈর (গাজীপুর), রংপুর, রাজশাহী, মাগুরা, নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, সৈয়দপুর (নীলফামারী) এবং মাদারীপুর প্রতিবেদক]