বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:০৬ পিএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:০৭ পিএম
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (১৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এসে শেষ হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘৭১Ñএর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, '১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার', ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লোগেছে’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি হলো- সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে নূন্যতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা। এছাড়া বৃহস্পতিবার এই দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজন আলী বলেন, ‘সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা ও মামলা দেওয়া হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে ততোদিন আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যূনতম কোটা রেখে কোটা সংস্কার করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, মামলা দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি অতিদ্রুত কোটা সংস্কার করতে হবে।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যে বৈষম্য তৈরি করার পায়তারা করছেন, তা বন্ধ করুন। মেধাভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে, তারা ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানের উত্তসূরী। আপনাদের মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। আপনারা একবারও কোটা বাতিলের দাবি জানাননি, সব সময় কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। কারণ আপনারা সুচিন্তিতভাবে বলেছেন কোটা থাকতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য। কোটার উদ্দেশ্য বৈষম্য দূর করা, বৈষম্য সৃষ্টি করা নয়। আর বাংলাদেশে এমনভাবে কোটা রাখা হচ্ছে যেখানে বৈষম্য-নির্মূল করা দূরে থাক বরং বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেছেন, আপনারা চেয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশ করতে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ করতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্য না দিয়ে কোটাকে বেশি মূল্য দেওয়া হচ্ছে। এই কোটা দিয়ে পুরো দেশকে, প্রশাসনকে মেধাশূন্য করে ফেলা হচ্ছে। আসলে এ সরকার কখনোই শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করেনি।