প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২২:৩৯ পিএম
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন। ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটাপদ্ধতি বাতিল করো’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে তারা কোটাপ্রথা বাতিলের আন্দোলন শুরু করেছেন সোমবার (১ জুলাই)।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ১৮-এর পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, সরকারি চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে একত্র হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে নাহিদ হাসান নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আঠারো সালের পরিপত্র বহালের জন্য প্রয়োজনে আবারও আন্দোলন নামব আমরা। আমরা দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একযোগে আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা দাবি আদায়ে সোচ্চার হন। আমাদের সাথে সমন্বয় করুন।’ সমাবেশ শেষে তারা প্রক্টর অফিসে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় সেবা অব্যাহত রাখার দাবি জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে থেকে বের হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে মূল ফটকের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে প্রতিবাদ মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড়, তাঁতীবাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দাবি আদায় না হলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারিও দেন তারা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বেলা ১১টায় সমবেত হন। তারা কোটাবিরোধী স্লোগান ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনে অংশ নিয়ে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, ‘কোটা সম্পূর্ণ বাতিল চাওয়া আমাদের দাবি নয়। এদেশের স্বাধীনতায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অতুলনীয়। কিন্তু তাই বলে সংখ্যালঘু সেই গোষ্ঠীর জন্য বিপুল সংখ্যক কোটা রাখার কোনো মানে হয় না।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ঢাবি, জবি, জাবি, চবি, রাবি ও ববি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক)