বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪৫ পিএম
বিশ্ব ব্যবস্থাপনা বুঝতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ব্যবস্থাপনা বুঝতে হলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, যাই হোক না কেন, অন্যকে বুঝা, পরমত সহিষ্ণুতা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা— সকল কিছুই রপ্ত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিশ্লেষণ বা বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা এবং অন্তদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
সোমবার (১ জুলাই) টিএসসি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ভালো চাকরি পাওয়া নয়, বরং জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সক্ষমতা অর্জন করাই হলো উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য।’
এসময় বিভিন্ন গবেষণা থেকে উদ্ধৃত বরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দুই ধরনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের কথা বলেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। তা হলো- ট্রান্সসেকশনাল মডেল ও ট্রান্সফরমেশনাল মডেল।
স্পিকার বলেন, ‘যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষা প্রদানে ট্রান্সসেকশনাল মডেল গ্রহণ করে তাদের শ্রমবাজারের চাহিদা ও ট্রেন্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার ভিত্তিতে কারিকুলাম প্রস্তুত করতে হয়; যাতে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক বিষয় ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে। যা তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে সহজেই কাজ পেতে সহায়তা করে। আর ট্রান্সফরমেশনাল মডেল শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন, সুনির্দিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা বাস্তব জীবনে প্রায়োগিক জ্ঞান এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য যথাযথ স্কিল প্রয়োগ করতে শেখায়। এ রকম স্কিল ডেভেলপমেন্ট বেইজড এডুকেশন একজন শিক্ষার্থীকে শ্রম বাজারের চাহিদা অনুসারে সমাজে সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রস্তুত করে।’
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কিছু করেছে। ব্রিটিশ রাষ্ট্র, পাকিস্তান রাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র- এই তিন শাসন আমলের নানা অন্তরাল অতিক্রম করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগোতে হয়েছে। বিপর্যয়গুলো খুব কঠিন বিপর্যয় ছিল। ১৯৭১ সালে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অবদান রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান বিতরণ করেছে, জ্ঞান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় দায়িত্ব পালন করেছে- তা হলো পূর্ব বঙ্গের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীকে পথ দেখিয়েছে। এ অবদান ঐতিহাসিক। আমি মনে করি, এমন অবদান বিশ্বে বিরল।’
উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যুগে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তোলা, সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং আগত পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের যুগের আলোকে তরুণ যুগে গড়ে তুলতে হবে। আগে আমরা গ্লোবালাইজেশন বলতাম, এখন বলছি ইন্টারন্যাশনালাইজেশনের যুগ। ইন্টারন্যাশনাইজেশনের কারণে একজন শিক্ষার্থী শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাকরির সুযোগ পাবে। সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম তৈরি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা যেন না থাকে। শিক্ষার্থী শিক্ষার মধ্যে যদি বিরক্তিবোধ করে, তাহলে সে শিক্ষা কখনও কার্যকর শিক্ষা হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় আনন্দ পাবে যখন সেটা প্রায়োগিক জীবনে ব্যবহার করতে পারবে। বাস্তবজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষা হলে তা হবে কল্যাণমুখী।’
এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। টিএসসির পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয় এটি।
সকাল ১০টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়।
আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।