বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ১২:১৪ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ১২:৪৭ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগ নেতা এসএম আক্তার হোসাইন। ছবি : সংগৃহীত
ইব্রাহীম ফরাজিকে সভাপতি ও এসএম আক্তার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির নেতারা জন্ম দিচ্ছেন নানা বিতর্কের। অভিযোগের জেরে কমিটি ঘোষণার ছয় মাস পরই স্থগিতও করা হয়েছিল। এর পাঁচ মাস পরে সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। আড়াই বছর ধরে চাঁদাবাজি, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগের পর এবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম আক্তার হোসাইনের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জবি ছাত্রলীগ নেতা এসএম আক্তার হোসাইন তার নিজ ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের এমসিকিউয়ের উত্তর অন্যজনকে প্রদান করেন। উত্তরপত্রের অধিকাংশই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলে যায়। তার সঙ্গে এক ব্যক্তির মেসেঞ্জারে কথোপকথনের প্রমাণাদি এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
মেসেঞ্জারবার্তায় দেখা যায়, যিনি উত্তর নিচ্ছেন তিনি আক্তারের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অনুরোধ জানান। জবাবে আক্তার সব উত্তর দিয়েছেন বলে ফিরতি বার্তায় জানান। সেই সঙ্গে এটি কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন আক্তার।
এদিকে সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসাইন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অন্য নেতারা। তার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।
কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, ‘ভর্তি বাণিজ্য, জালিয়াতি, টেন্ডার বাণিজ্য এসব তো ছাত্রলীগের উদ্দেশ্য না। যারা এসব করছে তারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে।’
জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহসভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক আক্তার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতি এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
এদিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে একটি অডিও ক্লিপও। আক্তারের মামাতো ভাই পরিচয়ে মাদারীপুরের কাকন মিয়া ভর্তি পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দেন এক ব্যক্তিকে। এ-সংক্রান্ত অডিও ক্লিপটি প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
অডিও ক্লিপে শোনা যায়, কাকন মিয়া নিজেকে আক্তারের আপন মামাতো ভাই পরিচয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন এবং কলরেকর্ড যাতে লিক না হয় সেসব ব্যাপারে সতর্ক করেন অপর পাশের ব্যক্তিকে।
এ বিষয়ে কথা বলতে কাকন মিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে আপনাকে ফোন নম্বর দিয়েছে তার সঙ্গে কথা বলেন, বলে লাইন কেটে দেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা এসএম আক্তার হোসাইনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে একটি গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া বক্তব্যে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
গণমাধ্যমকে আক্তার হোসাইন বলেন, ‘তাহলে আমার আপন ছোট ভাইয়ের তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা ছিল। সে প্রাইভেটে পড়ছে কেন? আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যে কথাগুলো বলছেন এর কোনো প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?’
অপরাধে জড়িত থাকলে আক্তারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ এসেছে। যাচাই-বাছাই চলছে। অনুসন্ধান করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কেউ অনৈতিক, গঠনতন্ত্র, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’