সেলিম আহমেদ
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৩:১৬ পিএম
ফাইল ফটো
নতুন শিক্ষাক্রম বা কারিকুলামের আলোকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পাঠদান শুরুর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে রয়ে গেছে ধোঁয়াশা। কোন পদ্ধতিতে এ দুটি স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একেক সময় একেক পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সংবাদ প্রচারিত হওয়ায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিকুলাম শুরু করার আগেই মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত হওয়া উচিত ছিল। একেক সময় মূল্যায়নের একেক পদ্ধতির কথা শুনে শিক্ষার্থীরাও দ্বিধা-সংশয়ে পড়ছে। তবে এনসিটিবি বলছে, শিগগিরই জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।
নতুন কারিকুলামের আলোকে গত বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শুরু হয় পাঠদান। চলতি বছর পাঠদান শুরু হয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে শুরু হবে পাঠদান। এ ছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গত বছর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদান শুরুর পর পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য বারবার বৈঠক করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), নতুন কারিকুলামের কোর কমিটিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো পদ্ধতিই চূড়ান্ত হয়নি। মূল্যায়ন পদ্ধতির সর্বশেষ নির্দেশনায়ও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এসএসসিতে দুই বিষয়ে ফেল করলেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকবে, তবে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ফেল করা বিষয়গুলোতে পাস করতে হবেÑ এ রকম বলা হয়েছিল এই নির্দেশনায়।
এনসিটিবির সর্বশেষ মূল্যায়ন নির্দেশনা-সংক্রান্ত এই প্রতিবেদন কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিভিশন কোর কমিটিতে পাস হওয়ার পরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, ওই শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও যত দিন পর্যন্ত যে ওই দুই বিষয়ে পাস করতে পারবে না, তত দিন পর্যন্ত সে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি কারিকুলাম বাস্তবায়নে যে সমস্যাগুলো সামনে আসবে তা-ও বাস্তবতার নিরিখে সমাধা করবে এই কমিটি।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
একাধিক অভিভাবক জানান, তারা সবাই তাকিয়ে আছেন মূল্যায়ন পদ্ধতির দিকে। তারা মনে করছেন, মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুবই ধীরগতিতে কাজ করছে। কারিকুলাম চালু হওয়ার দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত না হওয়ায় কারিকুলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তারা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক শেখ একরামুল কবির বলেন, ‘দেড় বছরেও কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত না হওয়া খুবই দুঃখজনক। কারিকুলাম যারা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন তাদের আসলে প্রস্তুতি ছিল কি না, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লিখিত না ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে, সেই সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল্যায়নের সিদ্ধান্তে আসা নিয়ে এমনটা হওয়া উচিত হয়নি। আরও আগে এটা করা উচিত ছিল। তবে সরকার নানা মত-দ্বিমত যাচাই করে মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দ্রুত সেটা করা উচিত।’
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘মূল্যায়নের বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের দিক থেকে একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এটার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই রূপরেখাটি জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটিতে (এনসিসিসি) যাবে। সেই কমিটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করলেই তা কার্যকর হবে।’ কবে নাগাদ কার্যকর হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এনসিসিসি বলতে পারবে, কবে তারা সেটি চূড়ান্ত করবে।’