× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নেতা যে রাতে নিহত হলেন

মোজাফফর হোসেন

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩৬ পিএম

নেতা যে রাতে নিহত হলেন

এ বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নাট্যদল এথিক নিজেদের দ্বাদশ মঞ্চ-প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চে নিয়ে এসেছে ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন নাটকটি। কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলনের আলোচিত গল্প ‘নেতা যে রাতে নিহত হলেন-এর নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন লেখক-নাট্যকার নির্দেশক রেজানুর রহমান।

১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন দেখার সুযোগ হয় আমার। ১৫ আগস্ট সপরিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলে দেশজুড়ে সংগঠিতভাবে বড় কোনো আন্দোলন হয়নি। তবে খুনি ঘাতকদের অস্ত্রের মুখেও অব্যক্ত ক্রোধে ফুঁসে উঠেছে লাখ লাখ মানুষ। সাধারণ মানুষ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি যাদের প্রেম ছিল অকৃত্রিম, প্রিয় নেতার এ রকম বর্বরোচিত মৃত্যুতে তারা প্রথমে বিস্মিত হয়েছে, হতবাক হয়েছে, পরক্ষণেই ফেটে পড়েছে ক্রোধে। লাখো কোটি মানুষের এই ব্যক্তিগত ক্রোধের গল্প চাপা পড়ে গেছে অস্ত্রধারী ঘাতকদের সতর্ক প্রহরা ও বেইমানদের হুংকারের মধ্যে। তেমনই এক চাপা পড়া গল্প রচনা করেছেন ইমদাদুল হক মিলন। একজন মহান নেতাকে দেশের অতি সামান্য এক মানুষ কতটা হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারে এবং তাঁর মুত্যৃতে কীভাবে ফুঁসে উঠতে পারে সেটাই গল্পের মূল বিষয়।

১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম ও স্বাধীন বাংলাদেশে বিদ্যায়তনটির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান সূচক ‘ডক্টর অব ল ডিগ্রি দিতে যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত। কিন্তু তিনি ১৪ আগস্ট নিজের সংগ্রামী জীবনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা স্মরণ করে কিছুটা ঠাট্টার ছলেই একান্ত সচিবকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যাত্রা কখনোই সুখকর হয়নি।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত রাজধানীর পুলিশ প্রশাসন। ঠিক তখনই, সমাবর্তনের আগের রাতে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাসার সামনে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির জন্য রতন মাঝিকে ধরে আনা হয় নিকটস্থ থানায়। রতন মাঝির সরল স্বীকারোক্তি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে আরও বেশি সন্দেহের সৃষ্টি করে। একজন মানুষ তার নেতাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছে রাজধানীতে, সঙ্গে এনেছে নিজের হাতে তৈরি চিড়া। নিশ্চয় কোনো বদ মতলব আছে লোকটির! এ সন্দেহ থেকে মৃদু জিজ্ঞাসাবাদের পর রতনকে আটকে রাখা হয় লকআপে। রতন মাঝি তার এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারে না। গ্রামের সহজসরল মানুষটি ভাষা দিয়ে বোঝাতেও পারে না নেতার প্রতি তার কী পরিমাণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

এরই মধ্যে পুলিশ বুঝতে পারে রতন মাঝি মিথ্যা বলেনি। ঠিক করা হয় তাকে ভোরে ছেড়ে দেওয়া হবে। সম্ভব হলে প্রিয় নেতার সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেবে পুলিশ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হলেও তাঁর বাসভবন ছিল মানুষের জন্য উন্মুক্ত। কতটা উন্মুক্ত তা বোঝার জন্য একটা ঘটনা স্মরণ করতে পারি। ১৯৭২ সালে নাটোর গণভবনে কুতুবুল আলমের গম্ভীরা গান শুনে বঙ্গবন্ধু তাকে জড়িয়ে ধরেন। ক্রমেই কুতুবুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘যখন তুই ঢাকায় আসবি তখন তুই সরাসরি গণভবনে আমার সঙ্গে দেখা করবি। যদি তুই দেখা না করছস, তাহলে তোকে আমি পুলিশ দিয়ে ধরে আনব। এরপর কুতুবুল গণভবনের প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ঠিক আছে। এখন থেকে নিরাপত্তার লোকজন তোকে আর চেক করবে না। বাংলার মানুষকে বঙ্গবন্ধুর এই অগাধ বিশ্বাসের সুযোগটা নিয়েছে ঘাতকরা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগে সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিল বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও শুভানুধ্যায়ীরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন এই বলে, ‘ওরা (সেনা সদস্যরা) আমার সন্তান, আমার কোনো ক্ষতি করবে না। এ বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হলো। ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আর অংশ নেওয়া সম্ভব হলো না তাঁর।

ভোরে থানায় আসে নেতার এই অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যার সংবাদ। দায়িত্বরত অফিসার রতন মাঝিকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত ঢাকা ত্যাগ করতে বলে, কিন্তু রতন মাঝি দাঁড়িয়ে থাকে, এক পা-ও নড়ে না। ঝড়ের আগাম মুহূর্তের মতো রতন মাঝি দম ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে জোর করে থানা থেকে বের করে দিতে গেলে সে চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আমাকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না সাহেব। আমাকে হাজতেই রাখুন। ছেড়ে দিলে নেতা হত্যার প্রতিশোধ নেব আমি। এতক্ষণ দেখা সহজসরল রতন মাঝিকে ক্রোধে ফেটে পড়তে দেখে দর্শকসারিতে থাকা প্রতিটি মানুষের মধ্যেও, এতটা বছর পরও, সেই ক্রোধ ছড়িয়ে পড়ে। এখানেই মঞ্চনাটকের অনন্যতা। মুহূর্তের জন্য ভুলে যাই আমরা সময়ের ব্যবধানের কথা। এরপর হয়তো আমাদের মনে পড়ে রতন মাঝির সেই ইচ্ছা এখনও সম্পূর্ণরূপে আমরা পূরণ করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কেউ কেউ এখনও বেঁচে আছে পালিয়ে, বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। নতুন প্রজন্মের সেই দায় নিয়ে, সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা রতন মাঝি এ কথা বলতেই যেন ফিরে এসেছে কখনও গল্পে, কখনও মঞ্চনাটকে।

রতন মাঝির চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন সুকর্ণ হাসান। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিন্টু সরদার, মণি কাঞ্চন, হাসান রিজভী, আজিম উদ্দীন, মনিরুল হক ঝলক, প্রদীপ কুমার, তারেক চৌধুরী রিমন, মো. এসপি খান শাওন, রেজিনা রুনি, মাহফুজ আফনান অপ্সরা, রুবেল খান প্রমুখ। দুয়েকজনের অভিনয় দুর্বল হলেও মোটের ওপর সেটা উতরে গেছে। নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, আলোক পরিকল্পক অম্লান বিশ্বাস, পোশাক পরিকল্পক এনাম তারা সাকি, আবহ সংগীত পরিকল্পক অসীম কুমার নট্ট, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। প্রত্যেকের কাজে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু এই সময়ের প্রেক্ষাপটে সার্বিক উপস্থাপনায় কিছুটা ঘাটতি থেকে গেছে। তার পরও বলব, এ নাটক আমাদের সবার দেখা উচিত, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা