× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কানাডার মূলধারায় বাংলাভাষী লেখকদের সংযোগ

সুব্রত কুমার দাস

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০২:৫৯ এএম

আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪২ এএম

কানাডার মূলধারায় বাংলাভাষী লেখকদের সংযোগ

টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অথরস (টিফা) বা আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। এতগুলো বছর ধরে টিফা চললেও আমাদের জানা মতে ২০২০ সালের আগে কোনো বাঙালি লেখককে কখনও ডাকা হয়নি। বর্তমান টিফার ৪৪তম বর্ষ। চলছে ১১ দিন ধরে। এবার তৃতীয়বারের মতো বাঙালি কবি-লেখকরা আমন্ত্রিত হয়েছেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ১১ জন বাঙালি লেখক অংশগ্রহণ করেন। টরন্টো শহরের কেন্দ্র হারভারফ্রন্টের মঞ্চে তিনটি সেশনে বাঙালি লেখকসমাজের প্রতিনিধিরা তিন ঘণ্টা ধরে কথা বলেছেন তাদের লেখালেখি নিয়ে। পাঠ করেছেন তাদের রচনা। বারবার তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে বাংলামায়ের কথা। টিফার ওয়েবসাইটে কানাডার মূলধারার কয়েকশ লেখকের সঙ্গে বাঙালি লেখকদের জীবনীও উপস্থাপিত হয়েছে। কানাডার মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোয়ও উচ্চারিত হয়েছে বাংলা ভাষার সৈনিকদের অংশগ্রহণের কথা। রবিবারের সেই বিকালে অনুষ্ঠান শেষে দলবেঁধে ফেরার সময় সবার চোখেমুখে ছিল বিজয়ের আনন্দ, সাফল্যের বিভা। সেই আনন্দ আর বিভার পরিক্রমা নিয়েই আজকের রচনা।

২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট কানাডায় আসার পর আমি সব সময় খোঁজাখুঁজি করতাম টরন্টোয় কোথায় কোথায় সাহিত্য নিয়ে কী কী উদ্যোগ চলছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম মূলধারার একটি সাহিত্যিক উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাই। টরন্টো শহরের যে অঞ্চলে আমরা থাকি তার নাম ইস্ট ইয়র্ক। ইস্ট ইয়র্ক আর্টস নামে একটি সংগঠন সে বছর ছোট্ট একটি অনুষ্ঠান করে। সেখানে একটু গান-কবিতাও ছিল। সেই অনুষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্ব পড়েছিল টরন্টো শহরের তৎকালীন পোয়েট লরিয়েট অ্যান মাইকেলসের ওপর। কবি অ্যানই আমাকে একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে সে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারা আমার কাছে সাহিত্যিক সমাজের প্রেক্ষাপটে আমার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠান দিয়ে কানাডার মূলধারার সাহিত্যের মানুষের সঙ্গে আমার চলাচল শুরু।

এভাবেই পোয়েট লরিয়েটের সঙ্গে আমার সংযোগ। সেখান থেকে বার্তাটি ক্রমে ক্রমে ছড়াতে থাকল। একসময় তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সংযোগও তৈরি হলো। ফলে পরবর্তীকালে নিজে যখন সাহিত্যিক উদ্যোগ নিতে শুরু করি, আমিও তাকে যুক্ত করতে চেষ্টা করি। আমরা যখন কানাডীয় বাঙালি লেখক সম্মেলনের আয়োজন করলাম, তখন পোয়েট লরিয়েটকে আমন্ত্রণ করলাম। যে সাহিত্য সংগঠনটি আমাকে আহ্বান করেছিল সেই ইস্ট ইয়র্ক আর্টসের প্রধান নির্বাহীকেও ডাকলাম।

আমরা আসলে তাদের সম্পৃক্ত করতে চাইছিলাম। ওরা আমাকে ডেকেছিলেন তাদের উদ্যোগে। আমার মনে হচ্ছিল আমাদের উদ্যোগে আমি যদি মূলধারার মানুষদের ডাকতে থাকি, তখন একটি সেতুর মতো হবে।

২০১৮ সালের মার্চে আমরা বিশ্ব কবিতা দিবস উদযাপন করি। সেই উদযাপনের উদ্বোধন করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী এবং কানাডার তৎকালীন পার্লামেন্টরি পোয়েট লরিয়েট জর্জ এলিয়ট ক্লার্ক।

২০২০ সাল ছিল টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অথরস বা টিফার ৪১তম বর্ষ। হঠাৎ টিফার পরিচালক রোলান্ড গালিভারের কাছ থেকে একটি ইমেল পাই। তিনি জানান, তিনি আমার সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। আমার যে সাহিত্যিক উদ্যোগ সেগুলো নিয়ে তার কাছে বার্তা গেছে। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে টরন্টো শহরে যে ভাষাগুলোর মানুষ সাহিত্যিক উদ্যোগের সঙ্গে বিশেষ প্রচেষ্টা দেখাতে পেরেছে, টিফা তেমন কয়েকটি ভাষাকে যুক্ত করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি ফরাসি বাদে অন্য যে ভাষাগুলোর লেখকদের টিফা সে বছর আমন্ত্রণ জানায়, বাংলা ছাড়া সেগুলোর মধ্যে ছিল স্প্যানিশ ইটালিয়ান।

২০২০ সাল তো করোনার কাল, মানে করোনা তো শুরু হয়েছে মার্চে; আর টিফা সাধারণভাবে অনুষ্ঠিত হয় অক্টোবর-নভেম্বরে। রোলান্ড যে জিনিসটি করলেন, প্রথমে তিনি আমার কাছে প্রস্তাব চাইলেন। টিফাতো সেবার ভার্চুয়ালি হবে। তিনি বা তারা আমাদের তিনটি অনুষ্ঠান করার সুযোগ দেন ২০২০ সালে। হ্যাঁ, সেগুলো ভার্চুয়ালি হয়েছিল। তার পরও সেটি তো টিফায় অংশগ্রহণ বটে। তিনটির ভেতরে দুটি অনুষ্ঠান বাংলায় করেছিলাম আমরা। একটি ছিল ইংরেজিতে। ইংরেজিতে যেটি ছিল সেটি হচ্ছে, ‘বেঙ্গলি লিটারেচার : অ্যা রেট্রোসপেক্ট সেই জায়গায় আমরা চারজন মিলে একটি বিবরণ বা উপস্থাপনা তৈরি করি। . দিলীপ চক্রবর্তী ছিলেন। তাসমিনা খান এবং মানসী সাহা ছিলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম।

এর বাইরে আরও দুটি যে অনুষ্ঠান ছিল সে দুটিতে অন্য যারা সংযুক্ত হয়েছিলেন তারা হলেন অশোক চক্রবর্তী, সৈয়দ ইকবাল, আকবর হোসেন, সম্প্রতি প্রয়াত সাঈদ যাদীদ, সুজিত কুসুম পাল, নাহার মনিকা সুরজিৎ রায় মজুমদার। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সে বছর টিফার ওয়েবসাইটে আমাদের অনুষ্ঠানগুলোর পরিচয় ওরা ইংরেজির সঙ বাংলায়ও লিখেছিলেন।

২০২২ সালে আবার টিফা থেকে ডাক পেলাম। শুরুতেই আমি একটি বিষয় মাথায় রেখেছিলাম, যে লেখকরা ২০২০ সালে অংশ নিয়েছেন তারা ২০২২ সালে দর্শকসারিতে থাকবেন। বাঙালি সমাজের অনেক জ্যেষ্ঠ লেখককেও সেবার আমি আহ্বান করেছি। জ্যেষ্ঠ লেখক আকতার হোসেন, রুমানা চৌধুরী ছাড়াও বাঙালি কবি-লেখকের তালিকায় আরও ছিলেন ভজন সরকার, বাদল ঘোষ, শ্রেয়সী ঘোষ, দেবাঞ্জনা মুখার্জি ভৌমিক, ভাস্বতী ঘোষ শুজা রশীদ।

যা হোক, ২০২০ সালে টিফায় অংশ নেওয়ার পর ২০২১ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক করফারেন্স করে। কনফারেন্সের আয়োজক ছিল সেন্টার ফর কানাডিয়ান স্টাডিজ। আমার যতদূর জানা, ভারতের শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন একটি সেন্টার আছে। ওই অনুষ্ঠানে তারা আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেন। তারা যখন জানলেন টিফায় আমাদের অংশগ্রহণের কথা, তখন কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বলেছেন যে টিফায় অংশগ্রহণ কানাডার বাঙালিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। আমাদের আনন্দ এই যে, সেই ধ্বজা আমরা এগিয়ে নিয়ে চলেছি। সে অগ্রযাত্রা টরন্টো তথা অন্টারিও তথা কানাডার সব বাঙালির।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা