জে কে রাওলিং
সালেহা চৌধুরী
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩ ১২:৩৯ পিএম
আজকের দিনে
হ্যারি পটার কেবল ব্রিটেনই নয়, বিশ্বে যেখানে যত ছেলেমেয়ে আছে, যারা ইংরেজি পড়তে পারে,
তাদের সবার কাছেই পরিচিত, সমাদৃত, নন্দিত। শোনা যায়, জে কে রাওলিং হন্যে হয়ে বই প্রকাশের
জন্য প্রকাশক খুঁজছিলেন। কিন্তু কেউ নিতে চায়নি তার ‘আবরা কা ডাবরা
বই।’ নয়জন প্রকাশক
যখন তাকে পত্রপাঠ বিদায় করলেন, তিনি হাল না ছেড়ে শেষে খুঁজে পান একজনকে। এরপর হ্যারি
পটার নামের বালকটি আর ঘটনা নয়, হলো ফেনোমেনা। হ্যারির জাদুর মতো জে কে রাওলিং এখন জাদুর
মধ্যমণি। ১৯৯৭ সালে হ্যারি নামের এই বালক প্রবেশ করে সাহিত্যের জগতে, তারপর রাতারাতি
বিখ্যাত।
হ্যারি ডেভিড
কপারফিল্ড নয়। অলিভার টুইস্ট নয় কিংবা জেন আয়ারও নয়। তবু সকলে তাকে ভালোবাসে। দেখতে
সে তেমন ভালো নয়। স্কুলে সকলে তাকে ঠাট্টা করে। বাবা নেই, মা নেই। তারা স্বর্গ থেকে
তাকে মাঝে মাঝে হাত নেড়ে ভালোবাসা জানায়। হ্যারি হারকিলিস নয়, কিন্তু দোলনায় শুয়ে সে
জব্দ করে একটি বিশাল সাপকে। হ্যারি সেই সব শিশুর একজন, যাদের জীবন মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ
নয়। কিন্তু তাকে রক্ষা করে সেই ম্যাজিক, সেই জাদুবিদ্যা, যা ভালোর জন্য যুদ্ধ করে।
যখন সে জানতে পারে সেই শক্তির কথা, হ্যারি হয়ে ওঠে বিশ্বনন্দিত। ‘পটারম্যানিয়াতে’ ভরে যায় সারা
পৃথিবী। হ্যারি যে স্কুলে যায় সে সাধারণ নয়, এক বিশেষ স্কুল। সেই হগওয়ার্ট স্কুলে তারাই
যেতে পারে, যাদের মধ্যে এমন জাদুবিদ্যার গুণ আছে। হগওয়ার্ট উইচক্রাফ্ট স্কুল, কী অসাধারণ
এক স্কুল! সেখানে কিং ক্রসের এক বন্ধ দেয়ালের প্ল্যাটফর্ম থেকে দেয়াল ফুঁড়ে মানুষ চলে
যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে ওই সংখ্যার কোনো প্ল্যাটফর্ম কিংস ক্রসে নেই। থাকলেও আমাদের
জানা নেই।
‘গবলেট অব ফায়ার’ বাজারে আসে
শনিবার। এই ছুটির দিনটাই ছিল নির্ধারিত। কারণ স্কুল খোলার দিন এই বই বাজারে এলে কেউ
স্কুলে যেতে চাইবে না। প্রথম দিনেই বিক্রি হয়ে যায় এক মিলিয়ন কপির এক-তৃতীয়াংশ। হ্যারি
যুদ্ধ করে ইভিল ফোর্সের সঙ্গে। কাজেই হ্যারির বিজয়ে সকলের আনন্দ। পৃথিবীর আর সব শিশুসাহিত্যকে
ম্লান করে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হ্যারি। ফ্রানসেস হজসন বার্নেটের ‘সিকরেট গার্ডেন’, ডালের ‘চকলেট ফাক্টরি’, ‘মাটিলডা’ এবং আর সব
কিংবা ‘টারজান’ বা ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’Ñ কেউ নয় হ্যারি
পটারের মতো। সবকিছুকে ছাড়িয়ে সূর্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে হ্যারি। ওর জন্মদিন ঠিক সেদিন,
যেদিন জেকে রাওলিং জন্মগ্রহণ করেনÑ ৩১ জুলাই, ১৯৬৫।
হ্যারি পটারের
জীবনে একটি মজার ঘটনা আছে। খবরের কাগজে যে খবরে হইচই শুরু হয়েছিল। যখন ‘হ্যারি পটার
অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার’ সিনেমা করতে গিয়ে একটি মেয়ের প্রয়োজন
হয়, তখনই এক মজার ঘটনার জন্ম হয়। পনেরো, ষোলো, সতেরো বছরের একটি মেয়ে যে দেখতে অনেকটা
চাইনিজ, তাকে খুঁজছিলেন পরিচালক। কারণ সেই মেয়েই হবে হ্যারির জীবনের প্রথম প্রেম, হ্যারির
জীবনের প্রথম চুমু। হারমিওন বা তার বন্ধু নয়। কিন্তু ‘গবলেট অব ফায়ারের’ চো চাং হ্যারির
জীবনে আনবে প্রথম প্রেমের ব্যথা।
একদিন সকালে
যখন এই নায়িকা বাছবার পালা, মানে অডিশনের দিন, দেখা গেল কনকনে শীতে পাইন আপেল স্টুডিওর
সামনে প্রায় এক মাইল লম্বা লাইন। চার হাজারের বেশি মেয়ে চো চাং-এর পার্ট পেতে আগ্রহী।
এই লম্বা লাইনে কাউকে কিছু না বলে এসে দাঁড়িয়েছিল ক্যাটি লাং নামের সতেরো বছরের এক
মেয়ে। যে মেয়ে স্কটল্যান্ডে এ লেভেল করছে। এমন একটি মেয়ে পেতে সারা পৃথিবী খোঁজা হয়েছে।
ইন্টারনেটে, এমকি চায়নাতেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। মুভি হিসট্রি বা সিনেমার ইতিহাসে
নায়িকা খোঁজার একটি কিংবদন্তির মতো গল্প আছে। সে গল্প ১৯৩৯ সালে ‘গন উইথ দি
উইন্ডের’ জন্য স্কারলেট
ও’হারার পার্ট
কে নেবে তারও একটি এমন প্রতিযোগিতা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ভিভিয়েন লি পার্টটি পান। কিন্তু
চো চাং-এর পার্ট পাওয়ার ইতিহাস তার চাইতে অনেক বড় ও ঘটনাবহুল। হতেই হবে এ যে জে. কে
রাওলিংয়ের ব্যাপার।
যা হোক, চার হাজার মেয়ের মধ্য থেকে যে মেয়েটিকে বাছা হয়, তার বাবাও একজন বিত্তবান মানুষ। মেয়েটি চাইনিজ নয়, স্কটল্যান্ডের। যে মেয়েটি হ্যারির হৃদয় অধিকার করবে এবং তাকে প্রথম চুমু দেবে। এরপরের ঘটনা মোটেই সুবিধের নয়। এই মেয়েটির কথা কাউকে কিছু না বললেও দেখা গেল মেয়েটির খোঁজ জেনে গেছে ‘পটারমানিয়াক’ লোকজন। দেখা গেল, বিবিধ ওয়েবসাইডে তাকে নানাভাবে গালমন্দ করা হচ্ছে। যারা সুযোগ পায়নি তারা এবং যারা ঈর্ষান্বিত তারা এমন কাণ্ড করছে। প্রশ্ন করা হয়েছিল, কারণ দর্শাও তোমরা কেন সতেরো বছরের একটি শান্তশিষ্ট মেয়েকে এত ঘৃণা করো? উত্তর একটাইÑ ‘উই উইল হেট হার টিল আওয়ার ডাইং ডে।’ কারণ ও কেন এত সুন্দরী মেয়ে থাকতে হ্যারিকে প্রথম চুমু খাবে? পাগলামি যে কত প্রকার হয় হ্যারি পটারের সবটুকু জানলে বুঝতে পারা যায়। আবার কেউ কেউ বলেছে, ‘আমরা ওকে ঘৃণা করি, কারণ ও বোকা, গর্দভ, পচা ও বাজে! আর এমন বোকা একটা মেয়ে হ্যারিকে প্রথম চুমু খাবে? আবার চায়না, ফিলিপাইন থেকে লোকজন বা যারা পার্ট পেতে চায় তারা বিস্ময় প্রকাশ করছে, যেমন দরকার তেমন মেয়ে চীন বা ফিলিপাইনে কি ছিল না? কোথাকার এক স্কটল্যান্ডের মেয়েকে চাইনিজ সাজিয়ে পার্ট করানো হবে চো চানের? কোরিয়া বা ফিলিপাইনের অনেক সুন্দরী যেখানে অডিশনেরই সুযোগ পায়নি, সেখানে এই মেয়ে কীভাবে সুযোগ পেল। এ হলো জে কে রাওলিংয়ের সাজেশন। যে মেয়েটি সরল ছেলে হ্যারিকে একজন প্রেমময় তরুণ করে তুলবে, তার পরিচিতি গোপন থাকাই ভালো।
জে কে রাওলিংয়ের
৬ নম্বর বই বাজারে আসে ২০০৬ সালের ১৬ জুলাইতে। সেদিনও ছিল শনিবার। ১১ মিলিয়ন কপি বই
বিক্রির জন্য তৈরি। পুরো বিশ্বে সাহিত্যের বই বিক্রির ইতিহাসে এমন কাণ্ড নাকি আগে আর
ঘটেনি। ৬ নম্বর বইটি হলো ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য হাফ ব্লাড
প্রিন্স’। সেখানে এই
চো চাং নেই। সেখানে তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বান্ধবী হারমিওন আছে। হ্যারিকে প্রথম
চুমু না খাওয়ার ব্যাপারে হারমিওনের মনের অবস্থা কী তা আমরা জানতে পারি না। হারমিওন
এমন কোনো মন্তব্য করেনি, যা খবরের কাগজে খবর হতে পারে। গল্পটা এমনÑ চো চাং হ্যারির
বন্ধু এবং সময় বিশেষে শত্রু সিডরিক ডিগোরির প্রেমিকা। তখনই ১৪ বছরের হ্যারি ওকে দেখে।
হ্যারি তখন ‘ট্রিগউ-ইজার্ড টুর্নামেন্ট অব হগওয়ার্টে’ খেলছিল। তারপর
প্রেমের সেই সব লক্ষণÑ জেলাস, থ্রিল, অনিশ্চিয়তা সব কিছুই তাকে দক্ষতার সঙ্গে পার্ট
করতে হয়, বালক হ্যারি হবে এবার প্রেমবিদ্ধ অ্যাডোলেসেন্ট। স্কুলের ইউল বুকে দেখা যায়
মেয়েটি তার সেই শত্রু কাম বন্ধুর সঙ্গে ভালো বাসাবাসি করছে। তারপর জে কে রাওলিং এমন
একটি গল্পের লাইন বেছে নেন, যেখানে এই চুমুর ব্যাপারটি ঘটে। কারণ সিডরিক ডেগোরি মারা
গেলে মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিতে চুমু খায় হ্যারি পটার। এরপর যা হয় সে এই, হ্যারি চো চাং-এর
সিডরিকের মৃত্যুর বিষাদ নিয়ে ঈর্ষান্বিত হয় আর মেয়েটি হ্যারির বন্ধু হারমিওনের উপস্থিতিতে
বিষাদিত। হারমিওনের পার্ট করে এমা টমসন নামের একটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে। আর হ্যারির
পার্ট করেন ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ।
জোয়ানা ক্যাথারিন
বলেছিল, নামটি জে কে রাওলিং রাখলে নাকি বালক পাঠকের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিনি পাবলিশার্সের
কথা শুনেছিলেন। কাজেই অনেকে বহুদিন জানতই না যে জে কে রাওলিং একজন নারী। প্রকাশক তাকে
আরও বলেন, ‘বাচ্চাদের বই লিখে তুমি কি পয়সা বানাবে জো? সেটা
তো সম্ভব নয়।’ এখন তিনি গ্রেট ব্রিটেনের একজন ধনী নারী। তার টাকার
পরিমাণ ৮২০ মিলিয়ন পাউন্ড। ২০২০ সালে তিনি একটি বাড়ি কেনেন, যার দাম ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় আছে তার দুই মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়ি। পৃথিবীতে যে কয়জন ধনী আছেন
তাদের মধ্যে তিনিও একজন। তার প্রথম বই ‘হ্যারি পটার
অ্যান্ড ফিলোসফার স্টোন’-এর একটি লেখকের অটোগ্রাফ করা কপি বিক্রি
হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ পাউন্ডে। প্রথম সংস্করণের কপি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেছেন কিছু
বই বিক্রেতা। প্রথম সংস্করণের একটি পাতা মোড়ানো বই বিক্রি হয় ১২ হাজার পাউন্ডে। ১৯৯৭
সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রায় চুপচাপই। কপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০০। সেই ৫০০ কপিই
পরে এমন ‘গবলেট অব ফায়ার’-এর মূল্যে
বিক্রি হয়।
তার লেখার
শুরুকে সকলে বলে ‘বার্থ অব এ ফেনোমেনন।’ যখন একজন
মা একা একটি শিশু নিয়ে সামান্য টাইপরাইটারে বই লিখতে শুরু করেন। কেউ তাকে পাত্তাও দেয়নি।
তিনি চুপচাপ ক্যাফেতে বসে একদিন বইটি শেষ করে ফেলেন। এই বইটি শেষ করে ‘টিচার ট্রেনিং’ পাস করে তিনি
টিচার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার
পরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তিনি এখানে-সেখানে ঘুরে বইটি শেষ করেন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে
থাকার সময় পর্তুগালে তিনি ‘ফিলোসফার স্টোন’ শুরু করেন,
যা লন্ডনে এসে শেষ করেন। এরপর তিনি শুধু গ্রেট ব্রিটেনে নন, এই বিশ্বের একজন ‘বেস্ট সেলিং
অথর’।
হ্যারির ব্যাপারটা
অনেকটা রাজা সলোমনের মতো। যে সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারে, যে খরগোশ হয়ে যেতে পারে। হ্যারির
জাদুর কার্পেটে এরাবিয়ান নাইটসের গন্ধ। আর জে কে রাওলিং বারবার তৈরি করেন বিবিধ প্রাগৌতিহাসিক
প্রাণীর মতো নানা সব প্রাণী। কোনো কুকুরের তিনটা মাথা। অন্যটার হয়তো চেহারা একদমই ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের গল্পের প্রসঙ্গ। আবার সেসব
জীবজন্তুদের দেখে মনে পড়ে যায় ড্রাগন বা ডায়নোসরের কথা। কল্পনার সঙ্গে পাঠের এবং পূর্ব
পরিচিত নানা চরিত্রের ছায়াপাত ঘটেছে তার বিবিধ গ্রন্থে। কিন্তু সবটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
তার পাঠক ধরে রাখা ভাষা ও গল্প সাজানোর জাদুকরি ক্ষমতা। জে কে রাওলিং আবার আমাদের মনে
করিয়ে দেন ছেলেমেয়েরা বই ভালোবাসে। কম্পিউটার গেম এবং টেলিভিশন, ভিডিওর পরও। কাজেই
হতাশ হওয়ার কিছু নেই, সত্য কি এই নয় আস্তে আস্তে আমাদের জীবন থেকে বই উঠে যাবে, থাকবে
কেবল বিবিধ ওয়েবসাইট। না হলে বিবিধ হার্ড আর সফ্ট ডিস্ক। ১১ মিলিয়ন বই এক মাসের মধ্যে
শেষ হয়ে যায়, কে পারবে তাকে বলতে এখন ‘জো, ওসব শিশুসাহিত্য
দিয়ে কিছু হবে না।’
জে কে রাওলিং
কি পড়াশুনায় খুব বেশি মেধাবী ছিলেন? না তিনি পড়াশুনায় ছিলেন ‘মিডিওকার’। এক্সিটার
ইউনিভার্সিটি থেকে ফরাসি ভাষায় বিএ পাস করেন। কিন্তু তিনি জানতেন তার পাঠক কারা হবে
এবং কেমন করে তাদের তিনি ধরে রাখবেন। ম্যাজিক বা জাদুবিদ্যা। যেন তার হাতে আছে জাদুর
কাঠি। একটা বইকে ছুঁইয়ে দিলেই ম্যাজিক। ভাবা যায় আমাদের দেশের একশ-দুইশ বই লেখা লেখক
আর তিনি?
এবার তার জীবনের
কিছু ঘটনা বলছি। এক. শোনা যায় হ্যারি পটারের মতো বই লেখার আরো ‘ম্যাটেরিয়াল’ নাকি তার
হাতে আছে। দুই. তিনি টাকা-পয়সার ব্যাপারে অনেক উদার। তাকে সকলে ‘ফিলানথ্রপিস্ট’ বা দাতা বলে
থাকে। তিন. তাকে যারা পছন্দ করে সেসব ফ্যানের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। চার. আগেই
বলেছি, পড়াশোনায় ভয়ানক মেধাবী তিনি ছিলেন না। মেধা ও লেখার ক্ষমতা দুটো আলাদা ব্যাপার।
পাঁচ. হ্যারি পটারের বইতে একটি মাত্র চরিত্র তার চেনা। একজন সত্যিকারের মানুষ থেকে
চরিত্র সৃষ্টি। বাকি সব কল্পনা। যার নাম বইতে গিল্ডরয় লকহার্স্ট। ছয়. তার ফ্যানেরা
শুধু অল্প বয়স্ক ছেলেপুলে নন। অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকও তার ফ্যান। স্টিফেন কিং তাকে
অনুরোধ করে বলেছিলেন, তুমি যেন ভুলেও হ্যারি পটারকে মেরে ফেল না। সাত. তার ক্লিনিকেল
ডিপ্রেশন আছে। বলেন, একবার একটি চরিত্রকে মেরে ফেলেছিলাম। কারণ তখন আমার ওপর ক্লিনিকেল
ডিপ্রেশন ভর করেছিল। আট. যখন সিরিয়াস ব্লাককে মেরে ফেলেছিলেন খুব কেঁদেছিলেন। মনে হয়
কোনো কোনো জায়গায় আমাদের সঙ্গে মিল আছে। নয়. প্রথম যে ভক্তের চিঠি বা ফ্যানলেটার তার
কাছে আসে. সেখানে তার ঠিকানা ভুল ছিল।
পুরস্কার পেয়েছেন
অসংখ্যÑ দেশ ও বিদেশে। স্পেন থেকে প্রিন্স অসটেরিয়াস। ফরাসি দেশের পুরস্কার। অসংখ্য
বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অসংখ্য ‘অনারারি’ সম্মান দান
করে। অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মানে ঋদ্ধ তিনি।
তাকে এই পৃথিবীর
সবচেয়ে ধনী লেখক বলা হয়। হ্যারি পটার সাতটি আর কিছু অন্য রকম বই। মজার ঘটনা এইÑ যে
হ্যারি পটারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল, সেই ড্যানিয়েল রাটক্লিফ হ্যারি পটারের সিনেমায়
পার্ট করে ৯ মিলিয়ন পাউন্ড উপার্জন করেন। এখন ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফও বড়লোক। ১৯৯৭ থেকে
২০০৭ সালের ভেতর সাতটি হ্যারি পটার লেখেন। ১০ বছরে এমন সাফল্য বিরল ঘটনা। তার প্রিয়
নম্বর ৭। বলেন, নামটি ম্যাজিকেল। আমার প্রিয় এই কারণে। ‘জাস্ট সিমস
এ গুড নম্বর ফর উইজার্ড।’ বাইবেলেও নাকি নম্বর ৭-কে পবিত্র নম্বর
বলা হয়। তার বইগুলো ৮৪টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। ৬০০০ মিলিয়ন কপি বই প্রকাশিত হয়। এখনও
বিক্রি চলছে, চলবে।
তাকে বিলিয়নারি
লেখক বলা হয়। তার পরও তিনি কাজ ছাড়েন না। এখন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, যার নাম
‘লুমাস’। গৃহহীন শিশুদের
গৃহ দেওয়াই এর প্রধান কাজ। তিনি খুঁজে বের করেন সেসব মা-বাবাদের, যারা বেঁচে থাকতেই
বাচ্চাকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেন। বলেন, ‘শিশুর জন্য
একটি পরিবার জরুরি। আশ্রমে বড় হওয়া কোনো কাজের কথা নয়।’
সকলে বলে তার
বিখ্যাত হওয়ার পেছনে কেবল ভাষা বা জাদু নয়, বরং বলা হয় গল্প বলার অসাধারণ কৌশল। যদি
গল্পের নিচে তার নাম নাও থাকে, তবু লোকজন তার গল্পগুলো ভালোবাসবে। এই কারণেই তিনি এত
জনপ্রিয়। তার মজার মজার শব্দ তৈরি। অসাধারণ সব নাম দেন তিনি। অসাধারণ শহর। অভূতপূর্ব
রেলওয়ে স্টেশন। চারটি ভাষা তিনি জানেন। ইংরাজি, ফরাসি, জার্মানি ও পর্তুগিজ। লিখতে
গিয়ে এই চার ভাষার মিশেল থাকে কখনও। হগওয়ার্থ যে ভাষা ব্যবহার হয় তার নাম ‘পারসেলটং।’ এই ভাষা জানা
থাকলে সাপের সঙ্গে কথা বলা যায়। হ্যারি পটারকে বলা হয় ‘লিটারারি মাস্টারপিস।’ আর তিনি নিজে
জাদুকরি। এমন একজন যেমনটি খুব বেশি আসে না।